এসবিএন ডেস্ক:
আর মাত্র তিনটি বল। ঢাকা ডিনামাইটসকে জিতিয়ে মহানায়ক হতে পারতেন ফরহাদ রেজা। কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে যে দাঁড়িয়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি! পরের দুটি বলই উড়ে গিয়ে আছড়ে পড়ল স্কয়ার লেগ বাউন্ডারির ওপারে। জমজমাট এ ম্যাচ ৬ উইকেটে জিতে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল আফ্রিদির সিলেট সুপারস্টারস। হেরেও অবশ্য সম্ভাবনায় এগিয়ে ঢাকা। আজ প্রথম ম্যাচে সিলেটকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস হারিয়ে দিলে রাতে অনুষ্ঠেয় নিজেদের ম্যাচের ফল নিয়ে আর ভাবতে হবে না ঢাকাকে। তবে সিলেট জিতলে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে জিততেই হবে ঢাকাকে।
মিরপুরের উইকেটের যা অবস্থা ছিল প্রথম পর্বে, তাতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ১৫৭ রান করা ঢাকা ডিনামাইটসের ড্রেসিংরুমে প্রশান্তি নেমে আসার কথা। কিন্তু ম্যাচের পর নাসির হোসেনই জানিয়েছেন, ‘উইকেট অনেক ভালো। তাই জানতাম জেতা অত সহজ হবে না।’ জুনায়েদ সিদ্দীকের হারানো দিন ফিরিয়ে আনা ৪৪ বলে ৫১ আর রবি বোপারার ৪০ বলে ৫৫ রানের ইনিংসে উইকেটের ব্যাটিংবান্ধব চরিত্রের প্রমাণও রয়েছে। তৃতীয় উইকেটে এ দুজনের ৮৬ রানের জুটি কার্যত ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিয়েছে ঢাকাকে। কিন্তু প্রথমে ইয়াসির শাহ এবং এরপর ফরহাদ ঠিকই ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন ঢাকাকে। তিন ছক্কায় ফিফটির পরই পাকিস্তানি লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহর বলে শর্ট কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন মাঝখানে পাঁচ ম্যাচ একাদশের বাইরে থাকা জুনায়েদ। এক ওভার পর ফরহাদের ফুলটসে লং অফে ক্যাচ দিয়েছেন বোপারাও।
দ্ইু সেট ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়ে আচমকা জয়ের সুবাস পেতে থাকা ঢাকার অধিনায়ক সাঙ্গাকারা ইনিংসের ১৯তম ওভারে আক্রমণে আনেন মুস্তাফিজুর রহমানকে। আফ্রিদি ব্যাট চালিয়েছেন কিন্তু লাগে না, সোহেল তানভীরের বেলায়ও ভিন্ন কিছু ঘটেনি। ওই ওভারে সিলেটের ইনিংসে যোগ হয়েছে মাত্র ৫ রান। তাই শেষ ওভারে জেতার জন্য দলটির দরকার ১০ রান। কে করবেন ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক ওভারটি-প্রশ্নটা নিয়ে উইকেটের পাশে অঘোষিত একটা টিম মিটিংই যেন সেরে ফেললেন সাঙ্গাকারা। নাসিরই সমাধান দিয়েছিলেন, ‘সাঙ্গাকারা জানতে চেয়েছিল ইয়াসির নাকি ফরহাদ, কাকে দিয়ে ওভারটা করানো যায়। আফ্রিদি আর বাঁহাতি সোহেল তানভীর স্ট্রাইকে থাকায় আমি ফরহাদকে বোলিং করাতে বলি।’ ফরহাদের নিখুঁত লেন্থের প্রথম বলে ১ রান নেন আফ্রিদি। পরের বলেই সোহেলকে বোল্ড করে গ্যালারি মাতিয়ে দেন ফরহাদ। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে আফ্রিদিকে স্ট্রাইক দেন সদ্যই ক্রিজে আসা মুশফিকুর রহিম। বাকিটুকু ইতিহাস। ফরহাদের চতুর্থ বলটা অত খারাপ ছিল না যে টেনে সেটাকে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাবেন আফ্রিদি। ২ বলে ২ রান, সামনে আফ্রিদি -স্নায়ুচাপে স্বভাবতই ভেঙে পড়েন ফরহাদ। অফস্টাম্পের ওপর ফুলটসকে অনায়াসে একই গন্তব্যে পাঠিয়ে নায়ক বনে যান আফ্রিদিই। এতক্ষণ প্লেয়ার্স ভিউয়িং এরিয়ায় হাসিখুশি ঢাকার কোচ মিকি আর্থার আড়াল নেন ড্রেসিংরুমে। তৃতীয় জয়ে সেমির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা সিলেটের ডাগআউট মেতে আনন্দে। এ আনন্দ-বেদনার মাঝে দর্শকের প্রাপ্তি বহুদিন পর জমজমাট একটি ম্যাচ।
ম্যাচ জয়ের পূর্ণ কৃতিত্ব সিলেটের। কিন্তু ঢাকা কি দায় এড়াতে পারে? অন্তত নাসির হোসেন পারবেন না। ২৩ বলে ৩১ করেছেন বটে, তবে নিজের ব্যাটিং নিয়ে তিনি নিজেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন, ‘ওই সময় চাপ নিয়ে নিয়েছিলাম। সাঙ্গাকারা বারবার বলছিল যে এটা তোমার শট নয়। যেটা তুমি সবচেয়ে ভালো পার, সেটাই করো।’ নিজের স্ট্রং পয়েন্টের ওপর বিশ্বাস রেখে দারুণ কিছু শট খেলেছেনও নাসির। কিন্তু মাঝপথে অকারণে অনেকগুলো বল নষ্টও করেছেন ঢাকার আইকন ক্রিকেটার। বিশেষ করে ১৬তম ওভারে মোটে ২ রান ওঠার দায় এড়াতে পারবেন না নাসির। মোহাম্মদ শহিদের ওই ওভারে অকারণে স্কুপ শট খেলতে গিয়ে পারছিলেন না তিনি, যা দেখে বিরক্ত কুমার সাঙ্গাকারা। উল্টো এক ওভার পর আউট হয়ে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু সে চাপকে জয় করেছেন ম্যালকম ওয়ালার ও তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন। নাসিরের পর ক্রিজে আসা ওয়ালার অপরাজিত থাকেন ৬ বলে ১৩ রান করে। শেষ ওভারে ঢাকার কাণ্ডারি সাঙ্গাকারা দারুণ বোলিংয়ের জন্য মোহাম্মদ শহিদকে পুরস্কৃত করে যাওয়ার পরের তিনটি বলই বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন মোসাদ্দেক। ৪ বলে তাঁর ১৩ রানের ‘ক্যামিও’ আড়াল হয়ে যায় আফ্রিদির ক্ষণিকের ঝড়ে।
টি-টোয়েন্টিতে নায়ক হতে খুব বেশি সময় লাগে না। মাত্র দুটি বলই যে কাল গড়ে দিল ম্যাচের ভাগ্য!