এসবিএন ডেস্ক:
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অর্থ মিলছে না।
যে সব দাতা দেশ ও সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চেয়েছিল তারাও এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে প্রকল্পটি নিয়ে এক ধরনের অনিয়শ্চতা তৈরি হয়েছে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তবে তিনিও অর্থায়নের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি।
আর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের ‘মাস্টার প্ল্যান’ অনুমোদনের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তারা প্রস্তাব পাঠিয়েছে। অর্থ সংস্থানের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত দেবে।
চলতি বছর মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, দ্বিতীয় রানওয়ে এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান’ উপস্থাপন করা হয়।
ওই মহা পরিকল্পনায় বলা হয়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু চলতি বছর প্রথম পাঁচ মাসেই ৬৭ লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন। দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের যাত্রী সংখ্যা প্রতি বছর ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তে থাকায় ২০১৯ সালে নতুন টার্মিনালের প্রয়োজন হবে।
১৩ মে ওই পরিকল্পনা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু জাইকা, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার এবং কুয়েত ফান্ড কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পে অর্থায়নে রাজি না হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
গত ৫ অগাস্ট বিমান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জাপান দূতাবাস ও জাইকাকে চিঠি পাঠানো হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আর সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চীন সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে বিমান মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া আগামী তিন বছরে বাংলাদেশে আটটি প্রকল্পে অর্থায়ন অনুমোদন করলেও তাতে এ প্রকল্প আসেনি।
কুয়েত ফান্ড কোনো প্রকল্পে যে পরিমাণ সহায়তা করে থাকে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ‘প্রাক্কলিত ব্যায়’ তার চেয়ে বেশি হওয়ায় তাদেরও সহায়তা করতে অনুরোধ জানানো হয়নি বলে জানানো হয় বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে।
প্রকল্পটির অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে শর্টলিস্টেড করা হয়েছে। আমাদের ইচ্ছা মার্চ-এপ্রিলে কাজ শুরু করা। তবে সেটা মনে হয় হবে না। আশা করি জুন-জুলাইয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”
সব ঠিকঠিক করা গেলে আগামী দেড় মাসের মধ্যে একনেকে প্রস্তাব তোলা যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মন্ত্রী আশার কথা শোনালেও অর্থায়নের বিষয়টি যে এখনও সুরাহা হয়নি, তা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম সানাউল হকের কথায় স্পষ্ট।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। এটি বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়াও হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যাচাই বাছাই করে অর্থায়নের উদ্যোগ নেবে।”
চেয়ারম্যান জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরের ‘ক্যাপাসিটি’ চারগুণ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে দুই টার্মিনালে যেখানে আটটি বোর্ডিং ব্রিজ রয়েছে, তৃতীয় টার্মিনাল হলে এর সংখ্যা হবে ৩২টি।
এর আগে গত ২০ মে ‘চায়না এয়ারপোর্ট কনস্ট্রাকশন গ্রুপ করপোরেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যালয়ে পৌঁছায়, যার মধ্যে শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ও আধুনিকায়নের বিষয়টিও ছিল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী তৃতীয় টার্মিনাল, ডোমেস্টিক টার্মিনাল ও কার্গোভিলেজ তৈরিসহ বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে ১৩০ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে চীনা ওই কোম্পানি মনে করছে।
তবে চায়না এয়ারপোর্ট কনস্ট্রাকশন গ্রুপের সেসব প্রস্তাবে সরকারের সাড়া মেলার কোনো খবর এখনও পাওয়া যায়নি।