সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে আজ ছিলো উত্তাল। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের শ্লোগানে ছিলো মুখরিত।
নানা ধরনের শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানারে লেখা ছিলো দেশ রক্ষার হৃদয়বিদারক আকুতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার শ্লোগান।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন অপপ্রয়াস রুখে দাড়াতে বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন। হাজার হাজার বাংলাদেশী ও ব্রিটিশ পতাকা শোভিত এ বর্নাঢ্য সমাবেশ এক অনবদ্য আকর্ষন সৃষ্টি করে।
মানবাধিকার সংগঠন সেইভ বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে আয়োজিত ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে বিশাল সমাবেশে এমনি দৃশ্য দেখা গেছে।
গত ৩০ মার্চ ২০১৬ বেলা ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে ২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিশ্বের সকল আর্ন্তজাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে অস্বচ্ছ, অগ্রহনযোগ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলা সত্বেও তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রহসনের বিচার মঞ্চস্থ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথিত শ্লোগান নিয়ে আওয়ামীলীগ বাংলাদেশে বাকশাল কায়েমের সুগভীর ষড়যন্ত্র করছে।
তাই তারা দেশের সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছেন তাদের সেই প্রতিবাদি কন্ঠকে স্তব্ধ করতে চাইছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগ যেভাবে হাজার হাজার প্রতিবাদি গণতন্ত্রকামী মানুষকে হত্যা করেছিলো এখন বাংলাদেশকে সেইরকম পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা বলেন সরকার একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলছে কিন্তু বিরোধী দল রাস্তার পাশে সাড়ে তিন হাত একটি ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করতে গেলেও এবং পুলিশ এবং আওয়ামীলীগের কর্মীরা এসে হামলা করছে।
অথচ সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি করলেও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বক্তারা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালকে আর্ন্তজাতিক ভাবে ধিকৃত ট্রাইবুনাল উল্লেখ করে বলেন শেখ মুজিব কর্তৃক ৭১ সালের একটি মীমাংষীত ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে শেখ হাসিনা ইসলামী আন্দলনকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।
একদিন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যাদের দরজায় এসে ধর্না দিতেন সেই জামায়াত ইসলামীকে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যায়িত করে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারীক হত্যা ষড়যন্ত্রের লিপ্ত রয়েছে এই জালেম সরকার ।
বক্তরা বলেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের গেইট থেকে সরকারী বাহিনী প্রকাশ্যে স্বাক্ষী অপহরন করে নিয়ে গেলেও ট্রাইবুনালের বিচারকরা সেটাকে আমলে নেন না। অথচ আসামি পক্ষ্যের আইনজীবিকে আদালত থেকে বহিস্কার করে দেন।
বক্তারা বিদ্যমান ট্রাইবুন্যালকে দলীয় আখ্যা দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিরোধীদলকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে এই ট্রাইবুন্যালকে ব্যবহার করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার। বক্তারা সরকারকে হুশিয়ার করে বলে আগুন নিয়ে খেলবেন না।
তাহলে এ আগুনে সরকারকে পুড়ে মরতে হবে। বক্তারা সকল রাজবন্ধির মুক্তির দাবী জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেয়া না হলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সকল দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবি বদরে আলম দিদারের পরিচালনায সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সেইভ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার নজরুল ইসলাম, ইউকে বিএনপি’র আহবায়ক এম এ মালেক, জামায়াতে ইসলামের ইউরোপের মূখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বক্কর মোল্লা, জামিয়তে উলামা ইউরোপের সভাপতি মুফতি শাহ সদুরুদ্দিন।
আর ও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যাক্তিবর্গ আব্দুল বাসিত, জুবাইর আহমেদ, সাইফুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের তথাকথিক ট্রাইবুন্যাল তার সকল নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। দলীয় বিচারকরা স্বাধীনভাবে কোন বিচার কাজ চালাতে ইচ্ছুক নয়। সরকারী নিদের্শনা অনুযায়ী তারা কাজ করছে। মূলত: লোক দেখানো নাটকের অংশ হিসেবে বিচার বিচার খেলা চলছে। কি রায় হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।
সময় হলেই তারা তা পড়ে শুনানো হয়। তারা বলেন, বর্তমান ট্রাইবুন্যাল একটি বিতর্কিত ট্রাইবুন্যাল তাই একে বাতিল করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের কাঠ গড়ায় দাড়ঁ করানো হোক। কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সে সৎ সাহস নেই। মূলত: শেখ মুজিবর রহমান ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজেই যুদ্ধাপরাধীদের মদদ করেছেন।
এমনকি ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে দিল্লি চুক্তির মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করেছে। আর সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মুজিব সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন।
প্রকৃত দোষীদের ছেড়ে দিয়ে আজ বাংলাদেশের নাগরিকদের বিচার করা হচ্ছে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগে। আর এ থেকে প্রমানিত হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়, আওয়ামী লীগের মুল টার্গেট জনপ্রিয় ইসলামিক ব্যক্তিবর্গ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্তর্জাতিক সকল মহল এই ট্রাইবুন্যালকে প্রত্যাখান করেছে। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইন আন্তর্জাতিক মানে নেই।
তারা বলেন, সরকার তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূলের অভিযানে নেমেছেন। দেশের মানুষ দেখেছে, কিভাবে চোর, বাটপার, জালিয়াতদের দিয়ে দেশের সম্মানিত মানুষদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ানো হচ্ছে।
ট্রাইবুনালে জামাতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী হতে সরকারের তরফ থেকে বাধ্য করা হয়েছিলো বলে নান্নু মিয়া জানান। একটি অফিসে গোপনে ধারণ করা এই ভিডিওতে দেখা যায় জনাব নান্নু খোলামেলাভাবে ট্রাইবুনাল নিয়ে বলেছেন, সরাসরি শেখ হাসিনার হুকুমে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য হয় মুক্তিযোদ্ধা নান্নু।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল এর জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য নিয়ে আসার অন্যতম নায়ক হচ্ছে লেফট্যানেন্ট জেনারেল ইমরুল কায়েস। তিনি সেনাবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড!
শেখ হাসিনা তাকে পদোন্নতি দেন! তিনি মুক্তিযোদ্ধা নান্নুকে ক্যন্টনম্যান্ট এ নিয়ে যেয়ে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বাধ্য করেন। সাথে জড়িত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি শামসুল হক টুকু। ব্যক্তিগত দূর্দশার বর্ণণা দিয়ে টাকা-পয়সার লেনদেন সহ এবং পুরো ঘটনার বিবরণ দেন।
নান্নু মিয়ার দেওয়া দশ মিনিটেরও বেশী ধারণ করা একটি ভিডিওতে বাংলায় বর্ণণার পাশাপাশি ইংরেজীতে দেয়া আছে।
১) নান্নু বলেন, “মামলার সরকারপক্ষ ৪-৫ জন স্বাক্ষীর একটা সিন্ডিকেট তৈরী করল। আমি সেই স্বাক্ষীদের একজন। আমাদের ক্যান্টলমেন্টে নিয়ে যাওয়া হল। সরকার আমাকে ৪/৫ টা মামলার প্রধান আসামী করে দিল।
২) নান্নু বলেন, “শেখ হাসিনা মাসের ৪ তারিখ আমার সাথে দেখা করেন এবং বলেন যে আমাকে স্বাক্ষী দিতে হবে। তিনি বললেন, “তুই স্বাক্ষী দিয়ে দে। আমি তোকে মুল্যায়ন করব’’।
৩) নান্নু ফাঁস করে দিলেনযে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুটাতে সরাসরি আর্মির সম্পৃক্ততা আছে। শেখ হাসিনার ডান হাত বলে খ্যাত লে. জে. ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে মিলিটারির একটা ইন্টিলিজেন্স বিভাগ ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করছে। নান্নু বলেন,“ইমরুল কায়েসকে পরবর্তী সেনা প্রধানকরা হবে। ছেলেটাই আমাকে ক্যান্টলমেন্টে নিয়ে স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করেছে”।
৪) এরপর নান্নু বললেন, কিভাবে তাকে স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হল। নান্নু বলেন, “আমার ছেলে BCS –এ ASP পদে চাকরি পেয়েছে। কিন্তু তাকে আউট করে দেওয়া হয়েছে”। তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকুর সাথে আমার একটা বোঝাপড়া হল।
টুকু বলল,“তুমি মুক্তিযোদ্ধা। নিজামীর বিরুদ্ধে তোমাকে যেভাবে স্বাক্ষী দিতে সেভাবে স্বাক্ষী দিবা।তাহলে তোমার ছেলের চাকরি বহাল থাকবে। অন্যথায় পুলিশ ইনভেস্টিগশনে তোমার ছেলের নাম বাদ দেওয়া হবে।এছাড়া আমার ছেলের বিরুদ্ধেও মামলাও দেওয়া হয়েছে যাতে কোনভাবেই চাকরিতে জয়েন করতে না পারে।
তখন আমি ছেলের চাকরির জন্য টুকুর কাছে স্যারেন্ডার করলাম। টুকু বলল,“আমি তোমার ছেলেকে চাকরি দেবো কিন্তু তোমাকে নিজামির মামলার চাক্ষুসস্বাক্ষী হতে হবে”।এছাড়া আর্মির ডিজিএফআই প্রধান বলল, “স্বাক্ষী আপনাকে দিতেই হবে,ইচ্ছা হলেও দিতে হবে,অনিচ্ছা হলেও দিতে হবে কারন সরকার আপনার উপর depend করছে”। আর এভাবেই আমাকে নিজামীর বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হল।
৫) নান্নুর ভাষ্যমত, “ওরা বলল ওরা আমাকে পিক আপ করে নিয়ে যাবে, রিহার্সাল করাবে, যা বলবে তাই স্বাক্ষী দিতে হবে। অন্যথায় RAB আমাকে নিখোজ করে ফেলবে”। এছাড়া বলল, “যদি আমি তাদের শেখানোর বাইরে কোন কথা বলি তারা আমাকে মামলায় জড়াবে এবং গ্রেফতার করবে’’
৬) নান্নু বলল, “এদের যা view দেখলাম, হাসিনার সাথে কথা বলে,এরা যেকোন প্রকারে ক্ষমতায় আসবে আর তাতে যদি বহু লোক মেরে ফেলতে হয়, তাও ফেলবে’’।
৭) নান্নুর ভাষ্যমত, হিটলারের পঞ্চম বাহিনীর মত RAB এর মধ্যে টুকুর একটা নিজস্ব বিশেষ বাহিনী আছে।এরাই যখন ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা ধরে নিয়ে যায়।
৮) নান্নু বলল, “এই শয়তানগুলোকে ভয় পাচ্ছি কেন জানেন? এরা মানুষ না। কথা না শুনলে এরা যে কাউকে মেরে ফেলে।
এ থেকে পরিস্কার বুঝা যায় এটি একটি জগন্ন মিত্যাচার এবং এটি একটি বিচারীক হত্যা কান্ড।
সমাবেশ থেকে এক দল প্রতিনিধি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।