এসবিএন ডেস্ক:
ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সির নামে আবারো জনশক্তি রফতানির প্রতারণায় নেমেছে এক্সপ্রেস এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেক নিরীহ তরুণ। মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে বারবার মনিরুজ্জামান ওরফে রাহিম তার ভুয়া এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তরুণরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি খাতও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
মনিরুজ্জামান সিঙ্গাপুরের স্থায়ী নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে কথিত সাইনবোর্ড সর্বস্ব কোম্পানির নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন। টঙ্গীর ৫৩৬, মন্দির রোড, ধউর, তুরাগ এ ঠিকানায় জনশক্তি রফতানির নামে তার একাধিক কোম্পানির খবর পাওয়া যায়। এসডিসি ওভারসিজ ট্রেনিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার, মেরিন কন শিপইয়ার্ড ট্রেনিং সেন্টার লিমিটেড, আইটিই এডুকেশন সার্ভিসেস এ ধরনের আরো অনেক নামে তার কথিত সব প্রতিষ্ঠান রয়েছে একই ঠিকানায়। বিদেশ গমনেচ্ছু যুবকদের প্রলোভনে ফেলতেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নানা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেন মনিরুজ্জামান। তার এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড আড়াল করার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে এক্সপ্রেস এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস নামে নতুন আরেকটি কোম্পানি করেন। এ কোম্পানিতে মনিরুজ্জামানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান সহযোগী পুন জু সিয়াং।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সিঙ্গাপুরে অবৈধ প্রক্রিয়ায় লোক প্রেরণ করে আসছেন মনিরুজ্জামান। ২০১১-১২ সালে সিঙ্গাপুরের শিপইয়ার্ডে ৫ থেকে ৭শত শ্রমিককে আকর্ষণীয় বেতনের কথা বলে প্রেরণ করে, যারা কেউই বৈধভাবে সিঙ্গাপুরে কাজ করার সুযোগ পাননি। ওই সময় বিষয়টি সিঙ্গাপুরের জনশক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনিরুজ্জামানের প্রতারণার বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানায়। এরপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের তৎকালীন প্রধান কর্মকর্তা যুগ্মসচিব সন্তোষ কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নিয়ে গোপনে প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করে। এতে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। সেখানে গিয়ে টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিঙ্গাপুরের সিমেন্স কোম্পানিতে অবৈধ প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণের লক্ষে সাক্ষাৎকার গ্রহণের দৃশ্য দেখতে পান। অথচ সিঙ্গাপুরে সিমেন্স কোম্পানি নামে কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব নেই।
কিন্তু বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে অবস্থানকারী মনিরুজ্জামান প্রায় একশ’ সিঙ্গাপুর গমেনেচ্ছুকের কাছ থেকে জনপ্রতি ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা অগ্রিম আদায় করেন। ২০১২ সালের এ ঘটনায় তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের প্রধান কর্মকর্তা যুগ্মসচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী প্রতারক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে তুরাগ থানায় হস্তান্তর করলেও মূলহোতা মনিরুজ্জামানকে ধরতে পারেনি। এনিয়ে তখন তুরাগ থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের প্রধান আকরাম হোসেন মানবকণ্ঠকে জানান, মনিরুজ্জামান ও তার নতুন প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রেস এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখবো।
এদিকে মনিরুজ্জামান আবারো মাথাচাড়া দিয়ে অবৈধভাবে সিঙ্গাপুরে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে জনশক্তি প্রেরণের লক্ষ্যে সিঙ্গাপুরস্থ বিভিন্ন কোম্পানিতে ধরনা দিচ্ছেন। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরস্থ বিভিন্ন কোম্পানিতে বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছেন মনিরুজ্জামান ও পুন জু সিয়াং। কিন্তু তাদের প্রতারণার বিষয় জানতে পেরে সেদেশের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো এক্সপ্রেস এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করে।
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিকারক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাশার মানবকণ্ঠকে জানান, এক্সপ্রেস এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড নামে আমাদের কোনো এজেন্সি নেই। এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমার জানা নেই। প্রতারণার অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে জানান বায়রার সভাপতি।