সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহভাজন চিকিৎসকদের আটক করেনি পুলিশ। তারা প্রতিদিন আসা-যাওয়া করছেন হাসপাতালে।
এ কারণে স্ত্রী-সন্তান হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিহত ফাতেমার স্বামী মো. তারেকুল হাসান।
২১ মার্চ রাতে মা ফাতেমা আক্তার (২৮) ও তার নবজাতক কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়।
তারেক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘটনার দিন বিভিন্ন সময় ওষুধ ও রক্ত কেনার জন্য আমি বেশ কয়েকবার বাইরে যাওয়া-আসা করি। এ নিয়ে আমার মাথাও ঠিক ছিল না।
এরই মধ্যে চিকিৎসকরা বিভিন্ন সময় সাদা কাগজ এনে আমার কাছ থেকে সই করেও নেয়। শুধু এটাই নয়, চিকিৎসকরা রোগীকে ফেলে চলে যায়। আমার কাছে না বলে অন্য এক আত্মীয়কে জানায়। চিকিৎসকরা কেন কোনো কিছু না বলে চলে গেলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের অবহেলার কারণে শুধু স্ত্রী নয়, সন্তানকেও হারিয়েছি। সুন্দর সংসারও শেষ হয়ে গেছে।
আর চার বছরের ছেলে অয়ন কোথায় পাবে মায়ের আদরযত্ন, স্নেহ-ভালোবাসা। তারপরও স্ত্রী-সন্তান হত্যার বিচারের আশায় থানায় মামলাও করলাম। কিন্তু পুলিশ চিকিৎসকদের গ্রেফতার করছে না। পুলিশ মামলা তদন্তের ব্যাপারে তেমন আন্তরিকতাও দেখাচ্ছে না।’
সরেজমিন ধলপুরের কোল্ডস্টোরেজ গলির বাসায় গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে ফাতেমার ছবি ঝুলছে। ছবির দিকে তাকিয়ে আছে অবুঝ অয়ন। সে বারবার মা আসছে না কেন জানতে চাচ্ছিল খালা বিউটির কাছে।
ঘরের চারদিক যেন মায়ের স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় বলে জানান আরেক খালা নার্গিস আক্তার।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে সন্তান প্রসবের জন্য মুগদা হাসপাতালে নেওয়া হয় তারেকের স্ত্রী ফাতেমাকে। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে বলেন সিজার করতে হবে।
চিকিৎসক তানজিনা, সুমী, আনিস ও মৌসুমী রাত ৯টায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান ফাতেমাকে। রাত ১১টার পর কাউকে কিছু না বলে চিকিৎসকরা চলে যান। পরে মুগদা হাসপাতালের চিকিৎসক সুমন তার (তারেকুল) এক নিকটাত্মীয়কে ফোনে জানান ফাতেমা মারা গেছেন।
এরপর অপারেশন থিয়েটারে যেতে চাইলে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা তাকে বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারেক মুগদা থানা-পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে অপারেশন থিয়েটার থেকে স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মুগদা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে গেলে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প পরিচালক আজিজুর নাহারকে বেলা ১১টার পর অফিসে পাওয়া যায়নি।
আর সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমানের কক্ষে গিয়েও তোকে পাওয়া যায়নি। তবে তারা কোথায় গেছেন জানাতে পারেননি এসব কর্মকর্তাদের গেটে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও পরিচালকের মোবাইল নম্বর পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
তবে হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, মামলায় যেসব চিকিৎসককে আসামি করা হয়েছে তারা সবাই ইন্টার্নি করছেন। ওই দিন অপারেশন থিয়েটারে একজন চিকিৎসকও ছিলেন না।
আর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ঠিকমতো রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এ কারণে ফাতেমার মৃত্যু হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা এ হাসপাতালে অহরহ ঘটছে। যার কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। আর এ অবস্থা হয়েছে হাসপাতালের দায়িত্বশীলরা ঠিকমতো অফিস না করায়।
মামলার তদন্ত করছেন মুগদা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) নাসিরউদ্দিন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, অপারেশন থিয়েটারে রোগী নেওয়ার আগে কাগজে-কলমে সরকারি নিয়মে যা করার কথা তার সবই করা হয়েছে।
ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে অপারেশন করার সম্মতিও দেন। এখন দেখা হচ্ছে অপারেশন করার সময় কোনো ধরনের অবহেলা হয়েছে কি না। তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ছাড়া আদালত থেকে জামিন নেওয়ায় চিকিৎসকদের গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান তিনি।