এসবিএনঃ দুর্বৃত্ত চক্রের কারণে সন্তানদের নিয়ে স্বামীর ভিটায় উঠতে পারছেন না প্রবাসী বৃদ্ধা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের মৃত হাজী মকবুল হোসাইনের স্ত্রী রাবিয়া খাতুন। বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নিজের জন্মভুমির মাটি ছেড়ে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পরও দেশ ও দশের জন্য আমার মন কাঁদে। প্রতিনিয়ত স্বজনদের স্মরণ করে কান্নায় চোখ ভেজাই। বার বার দেশের টানে জন্মভ‚মিতে ফিরতে হয় আমাদের মতো প্রবাসীদের।
প্রতিবারই আশা নিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখি। দেশ ও স্বজন, পরিজনকে ভালোবাসায় প্রীত হই আমরা। কিন্তু সম্প্রতি দেশে আমার স্বামীর ভিটা দুর্বৃত্তরা দখলে নেওয়ায় আমি ও আমার সন্তানেরা দেশে থেকেও অনেকটা পরবাসী জীবনযাপন করছি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি জীবন ও জীবিকার তাগিদে ছেলে মেয়ে নিয়ে স্থায়ীভাবে ব্রিটেন বসবাস করে আসছি।
স্বামী মৃত ও সন্তানরা প্রবাসী হওয়ায় দেশে আমার স্বামীর ভিটেবাড়ি দেখার জন্য কোনো নিকটাত্মীয় না থাকায় ছোট ছেলে মুহিতুল হোসেনের শ্বশুর মো. সিরাজুল ইসলামকে স্বামীর ভিটেবাড়িসহ সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব দিই।
আমার বেয়াই সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘদিন আমার স্বামীর ভিটেবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করেন। আমরা প্রবাসী ও আমার বেয়াই সহজ সরল হওয়ার কারণে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী দুর্বৃত্ত চক্রের নজর পড়ে আমার স্বামীর ভিটার উপর।
একই গ্রামের ইসমাইল আলীর ছেলে ফখরুল ইসলাম ও জয়নুল ইসলামের। তারা সন্ত্রাসীদের নিয়ে গত বছরের অক্টোবর মাসে বেয়াই সিরাজুল ইসলামকে জোরপূর্বক আমার স্বামীর ভিটা থেকে বের করে তারা দখলে যায়। এ সময় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয়। পাশাপাশি বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙ্চুর ও ক্ষতিসাধন করে।
খবর পেয়ে আমার ছোট ছেলে মুহিতুল হোসেন গত ফেব্রæয়ারি মাসে দেশে আসে। এ সময় সে তার পৈত্রিক ভিটায় প্রবেশ করতে চাইলে ফখরুল সশস্ত্র লোকজন নিয়ে মুহিতুলকে ঘরে প্রবেশে বাধা দেয়।
এ সময় মুহিতুলকে মারধোর করার লক্ষ্যে ধাওয়া করলে আত্মরক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী তার শ্বশুরের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
পরবর্তীতে ১৭ মার্চ আমি বড় ছেলে মুমিনুল হোসেনকে সাথে নিয়ে দেশে আসি। সন্তানকে নিয়ে আমার স্বামীর ভিটায় প্রবেশ করতে চাইলে ফখরুল ও তার লোকজন আমাদের বাধা দেয়।
এ সময় আমি স্বামীর ভিটায় প্রবেশে দৃঢ়তা দেখাতে ফখরুল ইসলাম আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এতে আমি আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। স্বামীর ভিটায় প্রবেশ করতে না পেরে আমি পার্শ্ববর্তী এক দেবরের বাড়িতে আশ্রয় নিই।
অদ্যাবদি সেখানেই আমি বসবাস করছি। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানায় লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করলেও থানায় মামলা নেওয়া হয়নি। ফলে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি। পাশাপাশি জীবননাশের আশঙ্কাও রয়েছে আমাদের।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, প্রবাসে উন্নত জীবনের হাতছানি ছেড়ে দেশ ও স্বজনদের মায়ায় দেশে এসেও পরবাসী জীবন যাপন করছি।
আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রশাসনের কাছে আহবান জানাচ্ছি, নৈতিকতা সীমা যারা লঙ্ঘণ করে আমার স্বামীর ভিটা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে আমাদের কষ্টে রাখছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ও সামাজিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মুমিনুল হোসাইন, মুহিতুল হোসাইন, শাম্মী আক্তার, কামরান আহমদ, আবদুস সালাম, সিরাজুল ইসলাম, স্বপ্না বেগম, আ ন ম জামান চৌধুরী প্রমুখ।