ডেস্ক নিউজ : জাতির পিতার মৃত্যুতে শোকাতুর গোটা বাঙ্গালী। পিতা হারানোর বেদনায় স্তব্ধ গোটা দেশ। একই সাথে মর্মান্তিক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে প্রকৃতিও। শোক ব্যথা আর প্রতিশোধ জানান দিতে সেদিন ফুঁসে উঠেছিল আকাশ। বুঝিবা ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব আর মেঘের অবিরাম কান্না জাতির জনকের কন্যাকে সমবেদনা প্রকাশের জন্য।
জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার সিলেট আগমণের ৪৩ বছর উপলক্ষ্যে আয়োজিত দু’আ মাহফিলে স্মৃতিচারণকালে বক্তারা এসব কথা বলেন। আয়োজক সংগঠন আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই (আবহবিচ) এর উদ্যোগে হযরত শাজালাল (র) এর দরগাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে রোববার (২৯ মে) এই মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট জেলা সভাপতি মুকির হোসেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত রায় দিপনের উপস্থিতিতে বক্তারা বলেন,সেদিনের সেই দিনটি ছিল ২৯ মে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, শেখ হাসিনা তখন তার ছোটবোন শেখ রেহানা এবং দুই সন্তানসহ স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ফলে তারা খুনিদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান।
ওইদিন ২৯ শে মে ৮১ সালে শ্রীচৈতন্যদেব আর হযরত শাহজালালের(রা:) পূণ্যভূমিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে যোগে সিলেট আসেন। সিলেটে আসার পর প্রথমেই চলে গেলেন হযরত শাহজালাল (রা:) মাজার জিয়ারতে। সেদিন পিতা হারানো অনাথ শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশাল জনসভায় বক্তৃতা দিবেন শেখ হাসিনা। আজকের আওয়ামী লীগ যেরকম ৮১ সালে সেরকম ছিল না। তারপরও আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেত। সোজা কথায় আওয়ামী রাজনীতির তখন ছিল বিরাট ক্রান্তিকাল।
বক্তারা বলেন, সেদিন সিলেটের আবহাওয়া খুবই খারাপ ছিল বৃষ্টি আর বৃষ্টি। তারপরও সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য। নারী-পুরুষ সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে দলের কর্মী বাহিনীর একমাত্র লক্ষ্য মা-বাবা হারা শেখ হাসিনাকে দেখার। কিন্তু এই বৃষ্টি উপেক্ষা করে নারী-পুরুষ সমাজের সকল স্তরের হাজার হাজার লোকজন শেখ হাসিনার জ্বালাময়ী কথাগুলো শ্রবণ করতে থাকে। শেখ হাসিনার অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সেদিন বলেছিলেন” সর্বপ্রথম দেশে ফিরে আসার পর হযরত শাহজালালের মাটিতে এসেছি, আমি আমার বাবার এবং পরিবার হত্যার বিচার চাই আপনাদের কাছে”।
বক্তারা বলেন, সেই সমাবেশের অনেক প্লান পরিকল্পনা ছিল। কে বক্তৃতা দিবেন, কে মানপত্র পড়ে শুনাবেন শেখ হাসিনার এই ঐতিহাসিক দিনে। কিন্তু সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেল ঝুম বৃষ্টির কারণে। মুকির হোসেন চৌধুরী ছিলেন গভর্নমেন্ট পাইলট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন। অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল মুকির হোসেন চৌধুরী শেখ হাসিনাকে মানপত্র পড়ে শুনাবে। কিন্তু প্রকৃতির বৈরিতার কারণে তাড়াহুড়া করে সভা শেষ করতে হয়েছিল। যার ফলে মুকির চৌধুরী শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার হাতে মানপত্র তুলে দিয়েছিল।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জনাব আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ ফরিদ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমশের জামাল, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম পুতুল, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, হাজী সাইফুল আলম, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জাকির হোসেন, সিলেট মদন মোহন কলেজের সাবেক জিএস অরুন দেবনাথ সাগর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এনামুল মুনীর, যুবলীগ নেতা শাখায়াত হোসেন আকন্দ, মৎস্যজীবী লীগের এম এন নবী,সিলেট মিডিয়ার আহমেদ বকুল, সিলেট ৭১ নিউজের সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক তাহের আহমদ, ব্যবসায়ী আবুল হায়াত শাহীন, কবি আবিদ ফয়সল,ঋষিকেশ দাস প্রমুখ।