‘কথায় আছে জীবন ক্ষণস্থায়ী কিন্তু তার কর্ম চিরস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনটাকেও মানুষ কর্মের মধ্য দিয়ে স্থায়ীভাবে সকল হৃদয়ে ঠাঁই নিতে পারে। এই বোধ জাগ্রত হতে হবে মন থেকে। সেই বোধ থেকেই কাজ করে যাচ্ছি মানুষের কল্যাণে। একটি আলোকিত মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য চষে বেড়াচ্ছি গোটা দেশ। মন সুন্দর হলেই পৃথিবীর সবকিছুই সুন্দর বলে মনে হবে। আমি সেই পথের একজন সহযাত্রী।’-কথাগুলো বলছিলেন দেশের একুশে পদকপ্রাপ্ত রত্নগর্ভা মায়ের সন্তান ড. অরূপ রতন চৌধুরী। মাতা বিশিষ্ট সাহিত্যিক,শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী ও পিতা সিলেটের কৃতিসন্তান শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী। অরূপ রতন চৌধুরী রণাঙ্গণের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মাদকমুক্ত আন্দোলনে এই নামটি দেশব্যাপী সমাদৃত। সমাজসেবার রাষ্ট্রীয় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি লাভ করেন একুশে পদক। ড. অরূপ রতন চৌধুরীর বড়ভাই অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, বোন অধ্যাপক ড. মধুশ্রী ভদ্র।
ড. চৌধুরী ১৯৮৯ সালে মাদক ও ধূমপানবিরোধী সংগঠন ‘মানস’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সারাদেশে রয়েছে এই সংগঠনের বিস্তৃতি। এ সংগঠনের মাধ্যমে দেশের যুব সম্প্রদায়কে ধূমপান ও মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে বিগত ৩৩ বছর ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। অধ্যাপক চৌধুরী বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির একজন উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের একজন সদস্য।
সিলেটের এই কৃতি সন্তান এবার লড়তে চান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। নিজের জন্মস্থান সিলেট-২ আসনকে নিয়েই তার সকল স্বপ্ন সাধ। কোনোদিন জন প্রতিনিধি হবেন-এমন স্বপ্ন বুকে লালন না করলেও মুক্তিযুদ্ধের দায়বোধ থেকেই কাজ করতে চান মানুষের কল্যাণে। জন্মস্থানের মাটি ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। কেনই বা হঠাৎ করে তিনি নির্বাচনমুখী এবং সিলেট-২ আসনকে নিয়ে কি পরিকল্পনা-সবিস্তার জানতেই সিনিয়র সাংবাদিক দেবব্রত রায় দিপনের মুখোমুখি দেশের এই প্রখ্যাত চিকিৎসক ড.অরূপ রতন চৌধুরী।
প্রশ্ন : আপনার জন্মস্থান সিলেট। তবুও আপনার সম্পর্কে সিলেটের মানুষের ধারণা একেবারেই কম। এই অবস্থায় আপনার নির্বাচনে অংশগ্রহণ-কতোটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম ?
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে। প্রসঙ্গটা হচ্ছে নির্বাচনের। আর আমরা সবাই জানি এটি একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। এই অধিকারের জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে নামেন নামি-দামী লোকজন। চলে প্রতিশ্রুতির বন্যা। প্রশ্ন হচ্ছে-নির্বাচন পরবর্তী প্রত্যেক নেতারা যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন, তাহলে দেশের কোনো অঞ্চল আর অবহেলিত থাকতো নায়। দেশের জনগণের চোখে-মুখে ভেসে উঠতো না হতাশার চাপ! দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসন শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যেতো আরও বহুদূর। কিন্তু তা হচ্ছে না। কারণ হচ্ছে-ক্ষমতায় গেলেই আমাদের চরিত্র পাল্টে যায়। বেমালুম জনগণের কথা ভুলে গিয়ে নিজের আখের গোচাতেই সচেষ্ট হয়ে উঠেন জনপ্রতিনিধিরা। তাদের এই লোভই দুর্নীতির দিকে ধাবিত করে। আপনি বলেছেন প্রভাবের কথা। প্রভাব হচ্ছে ভোটাররা। ভোটাররা যদি আমার পরিবার সর্বোপরি সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা মাথায় রেখে প্রার্থী বিবেচনায় রাখেন, সেক্ষেত্রে আমাকেই বেছে নেওয়া হবে বলে মনে করি।
প্রশ্ন : আপনি আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন চাইছেন। দল যদি আপনাকে মনোনয়ন না দেয়, সেক্ষেত্রে কি স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হবেন?
দেখেন, আমি রণাঙ্গণের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানেই সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করি। লক্ষ্য ছিল একটাই-দেশকে রক্ষা করা। যুদ্ধ না করেও আমি আজ কথা বলতে পারতাম! কিন্তু জীবনের মায়া ত্যাগ করে আজ যখন কথা বলছি-তখন আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. অরূপ রতন চৌধুরী। সুতরাং কাজের মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়াই বীরের লক্ষন। জাতির পিতার কন্যা হয়েও রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ কর্মগুনে আজ বাংলাদেশকে বিশ^ দরবাওে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। সেই অর্জন ধরে রাখতে হলে, মনে-প্রাণে দেশবান্ধব শক্তির প্রয়োজন। সুতরাং আমার বিশ^াস-দলীয় প্রধান বিষয়টি গুরুত্বেও সাথে বিবেচনা করে আমাকে সিলেট-২ আসনে কাজ করার সুযোগ করে দিবেন। তবে এর বাহিরে আপাতত অন্য কোনো চিন্তা করছি না।
প্রশ্ন : সিলেটের অনেক মানুষ আপনার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। সংক্ষেপে যদি কিছু বলা যায়-
প্রথমত ২০১৫ সালে সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় একুশে পদক লাভ করি। আমি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। মানস (মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির উপদেষ্টা, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য, ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজের ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টালসার্জারির প্রফেসর, বারডেম হাসপাতালের ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টাল সার্জারির সাম্মানিক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী, উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করছি। ১৯৭৬ সালে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে বি.ডি.এস, ১৯৮২-৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলোশিপ এবং ১৯৯২-৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক এট স্ট্রনিব্রোক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দন্ত চিকিৎসায় ফেলোশিপ লাভ। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি পিএইচডি অর্জন। ২০১২ সালে তিনি ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে ঋউঝজঈঝ (ফেলোশিপ ইন ডেন্টাল সার্জারি রয়েল কলেজ অব সার্জনস) ডিগ্রি লাভ।
প্রশ্ন : নির্বাচিত হলে সিলেট-২ আসনের জন্য যা করতে চান
আসলে পরিকল্পনা ছাড়া সকল কাজই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমত আমি যেটি করতে চাই, সেটি হচ্ছে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। সেটি সম্ভব না হলে দেশের সামগ্রীক উন্নয়নের মানদণ্ড সমৃদ্ধ হয় না। এই জন্য তৃণমূল থেকেই এই উন্নয়ন যজ্ঞ শুরু করতে হবে। সুস্থ্য পরিবেশের মানুষ সুষ্ট চিন্তা করতে পারে। আমি সর্বাগ্রে একটি সুস্থ্য পরিবেশ দিতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন কর্মোদীপ্ত, প্রাণোচ্ছল একটি যুব সমাজ। যাদের হাত ধরেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হবে বাসযোগ্য। যেমন ধরুণ-মাদক একটি ভয়ানক ব্যাধি। এই ব্যাধি হঠাৎ করেই নির্মূল করা সম্ভব হবে না। ঠিক তেমনি কয়েকটি রাস্তাঘাট তৈরি করে দিলেই তাকে উন্নয়ন বলেনা। যাদের জন্য উন্নয়নের সমাজ, উন্নয়নের দেশ-সবার আগে তাদেরকে চিন্তা-চেতানায়,মননে একটি সৃজণশীল পরিবেশ দিতে চাই। যে পরিবেশের মানুষ ভাবতে পারে অপর মানুষকে নিয়ে, নিজের দেশকে নিয়ে। সহজ কথা হলো- প্রতিটি মানুষ হবে একেকজন উন্নয়নকর্মী। তখন তাদেরকে আর কেউ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাবে না।