নিউজ ডেস্ক : বিশ্বের মুসলিমরা রোজা পালন করছেন। আর সেই রোজা এখন শেষের দিকে। শুরু হয়ে গেছে শেষ ১০ দিনের রমজান। আর শেষ ১০ দিনে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার বছরের চেয়েও উত্তম। রাসুল সা. বলেছেন তোমার রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত গুলোতে শবে কদর তালাশ কর যে রাতের ইবাদত আল্লাহর কাছে হাজার বছরের চাইতেও উত্তম। কারণ কদরের রাতেই আল্লাহ কোরআন নাজিল করেছেন।
নশ্বর পৃথিবীর মোহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অবিনশ্বর আখেরাতের প্রতি ধাবিত করার মাস রমজানুল মুবারকের আজ একবিংশ দিবস। আর মাত্র কয়েকদিন পর রমজান আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে।
নিয়মানুবর্তিতার এ বিশেষ মাস থেকে বের হয়ে আমরা আবারও আমাদের গতানুগতিক জীবনে ফিরে যাব। অথচ তাকওয়ার দাবি- জীবন পরিচালনা, আচরণ ও লেনদেনে সাবধানতা অবলম্বন, সমাজ ও সামষ্টিক কর্মকান্ডে শুদ্ধতা ও স্বচ্ছতা রক্ষা, দায়িত্বের অনুভূতি এবং সব কাজে আলস্নাহকে স্মরণ রাখার যে শিক্ষা নিয়ে রমজান মাস আগমন করেছিল, রমজান-উত্তর জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে সংশোধিত হলো, সেই সফলকাম হলো।’ (সুরা আল-আ’লা, আয়াত-১৪)
রমজান মাস শেষ হয়ে গেলেও এ প্রশিক্ষণ যেন আমাদের জীবনে জারি থাকে এজন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাগিদ দিয়েছেন। আলস্নাহ তাআলা বলেন, ‘আর ইয়াকিন (মৃতু্য) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর। সুরা আল-ইমরানের
১০২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ, তোমরা আলস্নাহকে ভয় কর। যথাযথভাবে ভয়। আর (পরিপূর্ণ) মুসলমান না হয়ে মৃতু্যবরণ করো না।
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাই মুমিন ব্যক্তি সময় থাকতেই আমল-ইবাদত অব্যাহত রাখে। সুতরাং রমজান মাস শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃত মুমিন ব্যক্তির রোজার ইবাদত শেষ হবে না। এটি সারা বছর চলতে থাকবে। যেমন, শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। আবু আইউব আনসারী রাদিয়ালস্নাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখল, সে যেন সারা জীবনই রোজা রাখল। (মুসলিম)
রমজান মাসের সম্পূর্ণ কার্যক্রমটি ইসলামি সংস্কৃতির মহান ঐতিহ্য বহন করে। রোজা মুসলমানদের আদর্শ চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা ও আলস্নাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়। সত্যিকার মুমিন হিসেবে গড়ে ওঠার অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাস এ রমজানুল মোবারক; এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। আলস্নাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সব প্রকার নাফরমানি কাজ থেকে দূরে থাকার নামই ‘তাকওয়া’। রোজা বান্দার মনে আলস্নাহর ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে থাকে। আলস্নাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদা নির্ধারণের একমাত্র উপায় তাকওয়া। এটিই মানুষের মনে সৎ ও মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। সুতরাং, যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে পারলেই রোজা পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা নিজেদের একজন সৎ ও খোদাভীরু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে। রোজার শিক্ষা নিয়ে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভ করতে পারে। মাহে রমজানের এ শিক্ষা যদি বাকি ১১ মাস কাজে লাগানো যায়, তাহলে পৃথিবীতে এত অশান্তি ও অনাচার থাকতে পারে না। মাহে রমজান মানুষকে ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত হওয়ার এবং কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার শিক্ষা দেয়। রোজাদার একমাত্র আলস্নাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ প্রভৃতি রিপু দমনপূর্বক রোজা পালন করেন। রোজার মাধ্যমে মানুষ পরমতসহিষ্ণুতা ও হতদরিদ্রের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার শিক্ষা লাভ করেন। রোজা মানুষের ভেতর ও বাহির দুই দিকের সংশোধন করে। মানুষের বাতেন বা ভেতরের অবস্থা পরিবর্তন করা, অর্থাৎ আলোকিত করা এবং তার স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচরণ সংশোধনপূর্বক প্রকাশ্যভাবে সুন্দর করে গড়ে তোলা রোজার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোজা মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। রোজা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, মিতাচার, মিতব্যয়িতা ও পারস্পরিক ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। তাই মাহে রমজানে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবাইকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে।
হাদিসে এসেছে, আলস্নাহ তাআলা আপনাদের জন্য রমজানের শেষের দিকে কিছু বাড়তি ইবাদতের বিধান দান করেছেন। সেগুলো তার নৈকট্য লাভের পথকে সুগম করবে এবং ইমানকে বৃদ্ধি করবে। আলস্নাহ তাআলা আরও নির্দেশ দিয়েছেন, সাদকাতুল ফিতর, তাকবীর ও ঈদের সালাত-এর।
ইরশাদ হচ্ছে, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আলস্নাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (সূরা বাকারা: ১৮৫)
রমজান শেষ হওয়ার সময় তার বড়ত্ব প্রকাশার্থে তাকবীর পাঠ করে থাকে। তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীলের গুঞ্জরণের মাধ্যমে আকাশ পর্যন্ত পৃথিবী মুখরিত করে তুলে। তারা আলস্নাহ তাআলার রহমত কামনা করে ও তার আযাবকে ভয় করে।
আলস্নাহ তাআলা বলেন, ‘বল, আলস্নাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম। [সূরা ইউনুস:৫৮]