২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। সিসিকে আওয়ামী লীগের হয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ৯ প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য, ব্যবসায়ী ও প্রবাসী রয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
এত দিন নির্বাচনী তৎপরতাও চলছিল ঢিলেঢালাভাবে। হঠাৎ গত ২/৩ সপ্তাহ ধরে নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল। তখন দলটির ভরসা ছিলেন প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এরপর দলীয় অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায় সেটি হাতছাড়া হয়ে যায়। মেয়র পদে প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিকল্প খুজছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও দলের নির্বাচনী বোর্ডের সিদ্ধান্ত আসলেই জানা যাবে নৌকার কান্ডারী কে হচ্ছেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্তে যিনি নৌকা পাবেন, তার পক্ষে কাজ করবেন।
এদিকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির লোক হওয়ায় আর কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। তবে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টির নবাগত নেতা নুরুল ইসলাম বাবুল। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দু একজন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করলেও হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী কেউই স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই।
সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ নভেম্বরে শেষ হচ্ছে। এর আগেই অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের হাই কমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রার্থীরা থাকছেন ভোটারদের কাছাকাছি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এটিএমএ হাসান জেবুল, সংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ব্যবসায়ী ও ফুটবল সংগঠক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম, সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল খালিক, সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
ইতোমধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হিসেবে হাই কমান্ড থেকে গ্রীন সিগনাল পেয়েছেন দাবি তার অনুসারীদের। তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজও শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন।
দলীয় প্রধানের আশীর্বাদে তিনি প্রার্থী হয়েছেন দাবী করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের জন্য তাকে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে সিলেটে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে সিলেটকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবেন। সিলেটের সকল সমস্যা দূর করে বিশ্বের আকর্ষনীয় নগরে পরিণত করবেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু সিলেট নগর ভবনে পিতার ছেড়ে যাওয়া স্থানে নিজেকে আসীন করতে চান। আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করা পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সিলেটবাসীর সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। ডা. শিপলু বলেন, খুব কাছ থেকে দেখেছি, সিলেটের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। পিতার কাছ থেকে নেয়া অভিজ্ঞতাই সিলেটের উন্নয়নে কাজে আসবে।
এদিকে ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসা এটিএমএ হাসান জেবুল দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। রাজনীতির কারণে জেল, জুলুম, হুলিয়া মোকাবেলা করেও আওয়ামী লীগের পতাকা আঁকড়ে রয়েছেন। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীর সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নগরের অলিতে গলিতে সাধারণ মানুষের কল্যানে নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত জেবুল এসোসিয়েট- এর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এটিএমএ হাসান জেবুল বলেন, পচাত্তর পরবর্তী সকল আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। জনগণের কাছাকাছি ছিলাম। প্রতিটি নির্বাচনে জীবন বাজি রেখে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। আমার সেন্টারে কোনো দিন নৌকা পরাজিত হয় নি। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করবো। মনোনয়ন না পেলে নৌকার পক্ষে কাজ করে যাবো।
ব্যবসায়ী ও বাফুফের সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম গত বছরের মত এবারও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, আমি সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যবসায়ী। প্রধানমন্ত্রী চাইলে ঢাকার মতো সিলেটেও মেয়র পদে একজন সংগঠক ও ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দিতে পারেন। আর এক্ষেত্রে আমি আশাবাদী মনোনয়ন পাবো। কারণ ২০১৮ সালের এক অনুষ্ঠানে ফুটবল সংগঠকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাওয়ার জন্য আমাকে বলেছেন। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে সিলেটকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এছাড়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজও আলোচনায় রয়েছেন। পাশাপাশি সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের অনুসারীরা গত নির্বাচনের মতো এবারও আজাদকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চাই- বলে অনলাইনে আর পোস্টার ব্যানারে দাবি জানাচ্ছে। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র তেমন একটা দৌড়ঝাপ দেখা যাচ্ছে না। এবার বিএনপি নির্বাচনে গেলে আরিফুল হক চৌধুরী একক প্রার্থী হবেন বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। যদি বিএনপি নির্বাচনে না যায়, তবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত একান্ত ব্যক্তি আরিফের বলে তারা জানান। আরিফুল হক চৌধুরী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুলের পোস্টার নগরের বিভিন্ন মোড়ে সাঁটানো হয়েছে।
সিলেট পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৮ সালে এবং সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০০২ সালের ২৮ জুলাই। সালে। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া ও টুলটিকর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই, বরইকান্দি ও তেতলী ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত করে সিলেট সিটি করপোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়তন ৭৯.৫০ বর্গকিলোমিটার।