এসবিএন ডেস্ক:
দেশীয় শিল্প সুরক্ষা ও সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি কমাতে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। যাতে বাস্তবতা বিবেচনা করে টু-হুইলারের নিবন্ধন ফি কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল বিক্রেতা কোম্পানীগুলো ও ক্রেতাদের ক্রমাগত দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয় এ সুপারিশ করেছে বলে জানা যায়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ‘মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি কমানোর সুপারিশ করে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। যত দূর জানি সহসাই এ ব্যাপারে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।’ ইতিমধ্যে মোটরসাইকেল শিল্প সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, সরকারের নীতিগত ভুলের কারণে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে তাতে দেশের সম্ভাবনাময় মোটরসাইকেল শিল্প মারাÍক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উচ্চ নিবন্ধন ফির কারণে গত কয়েক মাস মোটরসাইকেল বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। তাঁরা জানান, মধ্যমানের টু-হুইলারে নিবন্ধন ফি অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির দামের ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তাঁদের মতে, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও মোটরসাইকেল উৎপাদনে ঘটছে তার উল্টোটা। উপেক্ষিত হচ্ছে এ শিল্প।
এক হিসাব অনুযায়ী, ১০০ সিসি একটি মোটরসাইকেলের দাম যদি হয় এক লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা, ওই মোটরসাইকেলে নিবন্ধন ফি দিতে হয় ১৯ হাজার ৬৬৩ টাকা। এর বিপরীতে থ্রি-হুইলার বা ফোর-হুইলারের নিবন্ধন খরচ অনেক কম। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছয় লাখ টাকা দামের একটি থ্রি-হুইলারের নিবন্ধন ফি ১৩ হাজার ৮৬৬ টাকা। যা মোট দামের ২.৩১১ শতাংশ। একইভাবে ২০ লাখ টাকা দামের একটি ফোর-হুইলারের নিবন্ধন ফি ৮১ হাজার ১৮০ টাকা। যা গাড়ির দামের ৪.০৫৯ শতাংশ। শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, থ্রি-হুইলার এবং ফোর-হুইলারের তুলনায় টু-হুইলারের নিবন্ধন খরচ অনেক বেশি। অথচ মোটরসাইকেল কোনো বিলাসী যান নয় বরং এটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির চলাচলেরই একটি পরিবহন।
বিআরটিএর তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে যে সংখ্যক মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে তার অর্ধেকই নিবন্ধন ছাড়া। এর ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৭২ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হলেও নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৪৩ হাজার ৭২৯টি। ২০১৪ সালে এক লাখ ৯৯ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এর মধ্যে মাত্র ৯০ হাজার ৬৮৫টি নিবন্ধন হয়। ২০১৩ সালে এক লাখ ৬৫ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এ সময় নিবন্ধন হয় মাত্র ৮৫ হাজার ১১০টি।
সরকারি তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে দেশে পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৮৭৫টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়। এতে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব আসে ৬৭৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা। যদি নিবন্ধন ফি কমানো হতো তবে নিবন্ধনের পরিমাণ বাড়ত অনেক বেশি এবং রাজস্বও দ্বিগুণ হতো বলে জানান কর্মকর্তারা।
বিআরটিএর মতে, ৮০ সিসি বাইকের নিবন্ধন ফি ১৩ হাজার ৯১৩ টাকা। অন্যদিকে ১০০ সিসি বাইকের নিবন্ধন ফি ১৯ হাজার ৬৬৩ টাকা এবং ১০০ সিসির ওপরে বাইকের নিবন্ধন ফি ২১ হাজার ২৭৩ টাকা। যদি সব কিছু বিবেচনায় নেওয়া হয় তবে একটি বাইক কেনার খরচ ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। যা অনেক মানুষের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।