সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক::ব্রিট্রিস নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমকে আইএসের হয়ে লড়তে সিরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করা এক ব্যক্তি। তাঁর নাম মোহাম্মদ আল রশিদ। তিনি কানাডীয় গোয়েন্দাদের তথ্য সরবরাহ করতেন। রশিদ কানাডার কাছে শামীমার পাসপোর্টের তথ্য দিয়েছিলেন। খবর বিবিসির।
শামীমা বেগমের পৈত্রিক বাড়ি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে।
আইএস–বধূ’ শামীমার আইনজীবীরা এখন তাঁর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি হলো, শামীমা মানব পাচারের শিকার হয়েছেন। তবে নিরাপত্তা ইস্যুর কথা বলে এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ।
২০১৫ সালে শামীমা যখন যুক্তরাজ্য থেকে জঙ্গি সংগঠন আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় যান, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। তাঁরা হলেন খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আব্বাসি। তখন খাদিজার বয়স ছিল ১৬ বছর, আমিরার ১৫ বছর।
বিবিসির হাতে আসা গোয়েন্দা নথির তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের প্রধান বাসস্টেশনে এই তিন কিশোরী মোহাম্মদ আল রশিদ নামের একজনের সঙ্গে দেখা করেন। ওই রশিদই তাঁদের আইএস নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ায় নিয়ে যান।
বিষয়টি নিয়ে আইএসবিরোধী বৈশ্বিক জোটের অন্তর্ভুক্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি জানান, আইএসের কাছে মানব পাচারের সময় কানাডীয় গোয়েন্দাদের তথ্য সরবরাহ করতেন রশিদ
বিবিসি জানায়, রশিদের তথ্যসংক্রান্ত একটি নথি তাদের হাতে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। রশিদের হার্ডড্রাইভ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যও সেখানে আছে। রশিদ কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তা এসব তথ্য থেকে বিস্তারিতভাবে জানা গেছে।
মূলত সিরিয়ায় যেতে যাঁদের সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করতেন রশিদ। পরে সেই তথ্য তিনি জর্ডানে কানাডা দূতাবাসে পাঠিয়ে দিতেন। শামীমাকে আইএসের কাছে পাচার করার কয়েক দিন পর তুরস্কে আটক হন রশিদ।
সিরিয়ায় পাড়ি জমানোর পর যুক্তরাজ্যের মেট্রোপলিটন পুলিশ শামীমা ও তাঁর সঙ্গীদের খুঁজছিল। কিন্তু কানাডা কর্তৃপক্ষ তাঁদের পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য জানার আগেই সিরিয়ায় পৌঁছে যান শামীমা। নথি অনুযায়ী, একটি মানব পাচারকারী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শামীমাকে সিরিয়ায় পাঠানো হয়। তখন আইএসের স্বঘোষিত রাজধানী রাকা থেকে নেটওয়ার্কটি পরিচালনা করা হতো। ওই নেটওয়ার্কের তুরস্ক অংশের তদারক করতেন রশিদ।
শামীমা ও তাঁর সঙ্গীদের সিরিয়ায় পাঠানোর আগে অন্তত আট মাস ধরে এ কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন রশিদ। শামীমা ছাড়াও আরও অনেক ব্রিটিশ নারী, পুরুষ ও শিশুকে সিরিয়ায় পাঠিয়েছেন তিনি। নথিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে জর্ডানে কানাডা দূতাবাসে গিয়েছিলেন রশিদ। মূলত কানাডায় আশ্রয় চাইতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তবে কানাডার প্রশাসন তাঁকে আইএসের তথ্য সরবরাহের শর্ত দেয়। বলা হয়, আইএস–সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া সাপেক্ষে রশিদকে কানাডার নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিবিসি জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আটক হওয়ার আগে একাধিকবার রশিদ জর্ডান সফর করেছেন।
এদিকে শামীমার পরিবারের পক্ষ থেকে নিয়োগ করা আইনজীবী তাসনিম আখুনজে বলেন, আগামী নভেম্বরে শামীমার নাগরিকত্ব নিয়ে করা আপিলের শুনানি হবে। তিনি বলেন, অবাক করা বিষয় হলো, এই পাচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে কানাডার গোয়েন্দাদের সংযোগ রয়েছে।
সিরিয়ায় পাড়ি দিয়ে শামীমা ডাচ্ বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গি ইয়াগো রিদাইককে বিয়ে করেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ এক সাংবাদিক সিরিয়ার একটি শরণার্থীশিবিরে শামীমার সাক্ষাৎ পান। তখন শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান। এর কিছুদিন পর শামীমা একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। তবে কিছুদিন পর শিশুটির মৃত্যু হয়। ইয়াগো রিদাইক ও শামীমা বেগম দম্পতির আগেও দুটি সন্তান হয়েছিল। তবে কোনো সন্তানই বেঁচে নেই।
সিলেট৭১নিউজ /টিআ র