সিলেট৭১নিউজ:: টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুট ও এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার ডাকাত দলের সদস্যকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল সন্ধ্যায় শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ্র এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে দুপুরে ডিবি পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে গ্রেফতার ওই ডাকাত সদস্যকে আদালতে তুলেন। রিমান্ডে নেওয়া রাজা মিয়া (৩২) টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গৌরস্থান এলাকার মৃত হারুন অর রশীদের ছেলে। এদিকে ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। টাঙ্গাইলের কোর্ট ইন্সপেক্টর তানভীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা যায়, গতকাল ভোরে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকা থেকে রাজাকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এ সময় তার কাছ থেকে লুট হওয়া তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মির পর রাজা মিয়া গাড়ি চালিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস অন্তত ২৪ জন যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়।
পরে রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জে জনতা নামে একটি হোটেলে খাবারের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। সেখান থেকে সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রা করলে ৫ মিনিট যাওয়ার পর মূল সড়ক থেকে প্রথমে চারজন যাত্রী ওঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আরও তিনজন যাত্রী ওঠেন। পরে আরও ৫ মিনিট যাওয়ার পর নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া আরও তিনজন যাত্রী সেজে বাসে ওঠেন।
বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে যাত্রীরা ঘুমানোর একপর্যায়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকা পৌঁছলে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
প্রথমে পুরুষ যাত্রীদের তাদের পোশাক খুলে হাত-মুখ বাঁধা হয়। অপরদিকে নারী যাত্রীদের বাসের পর্দা ও সিটের কভার খুলে মুখ এবং হাত বেঁধে ফেলা হয়। পরে অস্ত্রের মুখে বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করা হয়। এ সময় ডাকাত দলের সদস্য রাজা বাস চালায়। টাঙ্গাইলের গোড়াই এলাকা থেকে বাসটি ইউটার্ন করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে।
এরই মধ্যে যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল, টাকা, কানের দুল, হাতের বালা, গলার চেইন লুট করে নেওয়া হয়। পরে পাঁচ থেকে ছয়জন ডাকাত সংঘবদ্ধভাবে গাড়িতে থাকা এক নারীকে ধর্ষণ করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এ ব্যাপারে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার হেকমত নামে ওই বাসের যাত্রী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন : গতকাল দুপুরে নির্যাতনের শিকার ওই নারীর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তার সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেহেনা পারভীনের নেতৃত্বে এ ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টার প্রাথমিক আলামত পাওয়া গেছে।
ডাকাতি ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরা চিহ্নিত : কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে তিন-চারজন টাঙ্গাইল জেলার ও বাকিরা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তবে তারা বসবাস করেন গাজীপুর, চন্দ্রা ও সাভার এলাকায়। গতকাল রাতে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এই চক্রের অন্যতম সদস্য রাজা মিয়াকে গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল ভোরে গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজা মিয়া ডাকাতি ও ধর্ষণে অংশ নেওয়া সবার নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে। ঘটনার দিন ঈগল এক্সপ্রেস নামে গাড়ির চালককে সরিয়ে ডাকাত দল বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে রাজা মিয়া ডাকাতি ও ধর্ষণ চলাকালে বাস চালিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
কুষ্টিয়া-নারায়ণগঞ্জ রুটে ঈগল পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা : টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে জিম্মি করে আলোচিত গণডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় কুষ্টিয়া-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ঈগল পরিবহন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকাল থেকে বাসের টিকিট বিক্রিও বন্ধ রাখা হয়েছে।