সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: ভ্যান চুরির অভিযোগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ইমন মোল্যা (১৭) নামে এক কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। বেধড়ক মারধর, বিড়ির আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা ও কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৫ জুলাই) রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
এর আগে শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে উপজেলার রামদিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ইমন কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের উত্তর ফলসি গ্রামের দিনমজুর ইসলাম মোল্যার ছেলে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, ভ্যান চুরির অভিযোগ তুলে এলাকার মহসিন, কামরুল শেখ, টুলু শরীফ ও সিরাজ ওই কিশোরকে ধরে মারধর করে। পরে তাদের সঙ্গে মিলে আরও লোকজন ওই কিশোরকে নির্যাতন করে। মার থেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ওই কিশোর মারা গেছে কি না নিশ্চিত হতে বিড়ির আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয় ওই কিশোরকে। পরে তার মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার কিশোরের বাবা ইসলাম মোল্যা বলেন, ‘শনিবার সকালে আমার ছেলে আশুতোষ ও রবিনের মাছ ভ্যানে নিয়ে রামদিয়া বাজারে যায়। সেখানে গিয়ে ভ্যান থেকে মাছ নামিয়ে রেখে নাস্তা করতে যায়। নাস্তা করে ফেরার পথে মহসিনসহ কয়েকজন তাকে ধাওয়া করে। বেথুড়ী ব্রিজের কাছে নিয়ে গিয়ে তারা আমার ছেলেকে মারধর করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহসিনের সঙ্গে কামরুল শেখ, টুলু শরীফ, সিরাজ যোগ দিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে ইমনকে নির্যাতন করে। অজ্ঞান হয়ে পড়লে বিড়ির আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়। পরে তারা আমার ছেলেকে রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির গেটের সামনে নিয়ে প্রকাশ্যে আবারো মারধর করে ও মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়। সে দৃশ্য ভিডিওধারণ করে পরে তারা ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। আমি খবর পেয়ে আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তারা আমার সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যায়। নির্যাতনকারীরা আমার ছেলের ভ্যানও আটকে রাখে। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।’
অভিযুক্ত কামরুল শেখ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইমনকে শুধু চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ঘটনার কথা স্বীকার করে রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাবুল আকতার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধরণের একটা ঘটনা ঘটছে। চুরি করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে এক কিশোর। তবে নিজামকান্দি ও বেথুড়ী ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ফাঁড়িতে কেউ অভিযোগ করেননি।’
নিজামকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান নওশের আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইমনকে মারধর করা হয়েছে সে বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে তাকে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা চরম অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা চরম অন্যায় করেছে। কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান