সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দ্রুতগতিতে বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি। যদিও এখনো সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তারপরও আগে থেকে নদ-নদী পানিতে ভরাট থাকায় চলমান বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে আবার বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, গত তিনদিন ধরেই সুরমা, কুশিয়ারাসহ সিলেটের বিভিন্ন নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, পুরোদমে বর্ষাকাল শুরু হতে আরও কয়েক দিন বাকি আছে। তারপরও এখন থেকেই প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হবে। বর্ষাকাল শুরু পর থেকে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে। কিন্তু প্রাক বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়ে নদ-নদী ভরাট হয়ে পড়েছে। তাই বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি ধারণ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হবে। আগামী ১১ জুন থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ১০ জুনের পর থেকে ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনটা হলে আগামী ১০ জুন থেকে ১২ জুনের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের কিছু নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বেড়েছ। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় এ নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ছিল ৯.৮৮ সেন্টিমিটার। সোমবার দুপুর ১২টায় পানি বেড়ে ১০.৩৯ সেন্টিমিটারে দাঁড়িয়েছে। সুরমা নদীর পানি রোববার সন্ধ্যায় কানাইঘাট পয়েন্টে ছিল ১২.৪৬ সেন্টিমিটার; যা আজ সোমবার দুপুরে হয় ১৯.৪৮ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে রোববার দুপুরে ছিল ১৪.৪২ মিটার। সোমবার দুপুরে হয়েছে ১৪.৬৫ সেন্টিমিটার। এ নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১১.১৪ সেন্টিমিটার; সোমবার দুপুর ১২টায় দাঁড়ায় ১২.২৮ সেন্টিমিটারে। শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বেড়েছে। এখানে রোববার সন্ধ্যায় পানিসীমা ছিল ৭.৬৮ সেন্টিমিটার; সোমবার দুপুরে হয়েছে ৭.৭০ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারার পানি বাড়ছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও। রোববার এখানে পানিসীমা ৯.৪৯ সেন্টিমিটার ছিল; রোববার বিকেলে পানি বেড়ে হয়েছে ৯.৭৮ সেন্টিমিটার। এছাড়া কানাইঘাটের লোভা নদীর পানিও বাড়ছে। রোববার এ নদীর পানিসীমা ছিল ১২.৬৩ মিটার; সোমবার দুপুরে হয়েছে ১৪.১৫ মিটার।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘আগামী ১০ তারিখ থেকে শুরু হয়ে থেকে ১৪ পর্যন্ত মধ্যে ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সিলেট অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সে সময় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। আমাদের চলমান বৃষ্টির পাশাপাশি মূল চিন্তার কারণ পাহাড়ি ঢল।’
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে সিলেটে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নদ-নদীর বাঁধগুলো মেরামত ও সংস্কারের কাজ করা শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সেই মেরামত কাজ শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশিদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থলের নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের মেরামত সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গেল মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল সিলেট ও সুনামগঞ্জ। প্রায় এক সপ্তাহ স্থায়ী সে বন্যায় শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয় এ দুই জেলায়। সে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই এবার আরেক ধাক্কা যেন আসছে।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান