ষ্টাফ রিপোর্ট: তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে এবং সরকারের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদল কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে হামলা চালিয়েছে যুবলীগ। বৃহষ্পতিবার বিকালে নগরীর রেজিষ্ট্রারী মাঠে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ফয়েজ উদ্দিন (৩১) নামক যুবদল নেতা নিহত হন এবং ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নিহত যুবদল নেতা সিলেট সদর উপজেলার টুকের বাজারের আব্দুল হান্নানের ছেলে। জানা গেছে যুবদলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসাবে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদল। বৃহষ্পতিবার বিকালে রেজিষ্টারী মাঠে সমাবেশ চলাকালে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল বাছিত রুম্মানের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক সশস্ত্র যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হামলা চালায়। এতে মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হান্নান সহ ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহত যুবদল নেতা ফয়েজ উদ্দিন (৩১) কে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। আহত অন্যান্য নেতাকর্মী নগরীর বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহত যুবদল নেতা ফয়েজ উদ্দিনের মৃতদেহ শুক্রবার সকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাদ আসর জানাযা শেষে টুকের বাজারস্থ পঞ্চায়েতি কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এদিকে ঘটনায় নিহত যুবদল নেতা ফয়েজ উদ্দিনের বাবা আব্দুল হান্নান কতোয়ালী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই ঘটনায় শুক্রবার রাতে কোতয়ালী থানায় এস আই শাহিন উদ্দিন বাদী হয়ে উল্টো যুবদলের ২০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৭ তারিখ: ০২/০৩/২০১৮ই। মামলার আসামী হলেন, ১। গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা গ্রামের রহিমের ছেলে আবদুল মান্নান (৪৫), ২। কানাইঘাট উপজেলার দাবাধরনীর মাটি গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহীম আলী (২৬), ৩। কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বড়দেশ গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে মামুনুর রশীদ মামুন (৪০), ৪। সদর উপজেলার বড়কাপন গ্রামের আবুল হাশিমের ছেলে আবুল কাশেম (৩৫), ৫ । দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি গ্রামের বুলবুল মিয়ার ছেলে কুহিনুর আহমদ (৪২), ৬ । সিলেট সদর উপজেলার মেজরটিলার আবদুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান (৩৯), ৭। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বদিকোনা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে মকসুদ আহমদ (৩৭), ৮। জৈন্তাপুর উপজেলার ওসমান গণির ছেলে ইকবাল আহমদ (৩৫), ৯ । ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার শাহাব উদ্দিনের হেলে জিলুর রহমান (৩০), ১০। বিয়ানীবাজার উপজেলার শাহীন উদ্দিনের ছেলে রিপন আহমদ (৩২), ১১। নগরীর আম্বরখানা বড়বাজার এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে আশিকুজ্জামান আশিক (২৬), ১২। আনিসুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী দিলওয়ার (২৫), ১৩। দাড়িয়াপাড়ার শেখ মকন মিয়ার ছেলে শেখ মো. নয়ন (২৯), ১৪। বিমানবন্দর এলাকার মিসবাউল ইসলামে ছেলে রিমন হাসান রিমু (৩০), ১৫। খাসদবির এলাকার সজিবুর রহমানের ছেলে হিল্লোল আহমদ (২৫), ১৬। নয়াসড়ক এলাকার ফখরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলে মিছবাহ আহমদ চৌধুরী (৪২), ১৭। পাঠানটুলা এলাকার আলী হায়দারের ছেলে কামরুল আলম আলম (৩২), ১৮ । শাহী ঈদগাহ এলাকার শফিকুর রহমানের ছেলে মুজিবুর রহমান পাবলু (২৯), ১৯। চৌকিদেখী এলাকার ফরহাদ হোসেনের ছেলে রাহেল আহমদ (২৯) ও ২০। মদীনা মার্কেট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে হাবিব আহমদ মুক্তা (৩০)। এদিকে শাস্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার নিন্দা ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নের্তৃবৃন্দ। শুক্রবার রাতে গণম্ধ্যামে প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞাপ্তিতে এক যৌথ বিবৃতিতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামিম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাছিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন যুবদলের শাস্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা তাদের বাকশালী চরিত্রের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে । যুবদল নেতা ফয়েজ উদ্দিন কে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে । আবার উল্টো যুবদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী সরকার দলের লাঠিয়াল বাহিনীর ন্যায় আচরণ করছে। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টামূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবী জানান তারা। এদিকে হামলার ঘটনার ব্যাপারে সিলেট মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি বলেন, যুবলীগের পক্ষ থেকে নগরীতে মিছিল চলাকালে রেজিস্টারী মাঠের সামনে যাওয়ার সময় যুবদল নেতাকর্মীরা আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে । এই সময় দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । যুবদল নেতা ফয়েজ উদ্দিন কিভাবে মারা যায় সে ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই বলেও জানান। এব্যাপারে এসএমপির কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোঃ গৌঁছুল হোসেন বলেন, যুবদল ও যুবলীগের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে । পুলিশ বাধা দিতে গেলে যুবদলের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করে । এতে যুবদল নেতা মারা যান । ঘটনায় ৭/৮ জন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে । তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।