সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে। বুধবার (১৮ মে) সকাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। এছাড়া সিলেট নগরীর বন্যা কবলিত এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করায় বিদ্যুৎ ছিল না দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ।
ওই সব এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে। কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমড় পর্যন্ত পানি রয়েছে। পানির কারণে মানুষজন রাস্তায় চলাচল করতে পারছেন না। বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে নর্দমার পানি প্রবেশ করায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
জানা গেছে, বন্যার কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার দোকানপাট ও হাটাবাজার পানির নিচে থাকায় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা-সারি, ধলাই সবকটি নদনদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান আজ (বুধবার) সিলেট আসছেন।
ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জেলা শহর, ছাতক পৌর শহরের পাড়া মহল্লার সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বাড়িঘরে ঢুকছে ঢলের পানি। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে যান চলাচল।
সিলেট শহরের কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোমড় সমান কোথাও হাটু পানি। নালার ময়লা মিশ্রিত পানি বাসা বাড়িতে ঢুকছে। ময়লা দুর্গন্ধ জনিত পানি মাড়িয়ে পথ চলতে হচ্ছে নগর বাসীকে।
নগরের সোবহানীঘাট, তেরো রতন, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, সাদিপুর, ছড়ারপার, কালীঘাট, তালতলা, তোপখানা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, কাজিরবাজার, মোল্লাপাড়া, ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, লামাপাড়া, শেখঘাট, খারপাড়া, মজুমদারপাড়া, আখালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে। বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নগরে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অনেক জায়গায় নলকূপ ও চুলা পানিতে ডুবে গেছে। পানি বাড়ায় বিছানাপত্র রক্ষায় অনেকে খাটের নিচে ইট বিছিয়ে উচ্চতা বাড়িয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকার পীরপুর, হায়দরপুর, টুকেরগাঁও, শাহপুর, গৌরিপুর, মইয়ারচর, নওয়া খুরুমখলা, নাজিরগাঁও, শেখপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সুরমার পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। এসব এলাকায় কোথাও চার ফুটের ওপর পানি। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী কান্দিরগাঁও ইউনিয়নে। জালালাবাদ ইউনিয়নের শিবেরবাজার এলাকার মানুষ পানিবন্দি। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেট সিটি করপোরেশন নগরের সাতটি ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে।
সিলেট নগরীর এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক বন্যা দুর্গত লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া সুরমা নদীর তীরবর্তী বরইকান্দি বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-৩-এ পানি প্রবেশ করায় মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল থেকে স্টেশন রোড, বাবনা, বঙ্গবীর রোড, পিরোজপুর, লাউয়াই, বরইকান্দি, মোল্লারগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
যমুনা তেল ডিপোতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তেল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সুরমা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা চালের আড়ত ও মিলে পানি প্রবেশ করায় বিপুল পরিমাণে ধান-চাল ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে ট্রাকযোগে ধান-চাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে সীমান্তবর্তী সিলেট সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তীত রয়েছে। গরু-মহিষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই সব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষজন। উপজেলার স্কুলগুলোকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা-জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৯০ ভাগ মানুষ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরাবাজের পানি উঠে যাওয়ায় যানচলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।
সিলেট শহরের সঙ্গে কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পরিবহনের অভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণ সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল।
কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর, ইছাকলস, দক্ষিণ রনিখাইসহ সবকটা ইউনিয়নের তিন-চারটি করে গ্রাম ছাড়া বাকি সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। অনেকে আসবাবপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন। ওই সব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে খাটের উপরে অবস্থান করছেন। নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না অনেকে। এ অবস্থায় অত্যন্ত কষ্টেআছেন ইউনিয়নবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, ‘উজানে এখনো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার-চাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আজ তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিলেট সদরের হাটখোলা-জালালাবাদসহ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন। ত্রান ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানও সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈয়ন্তাপুর এলাকা পরিদর্শন করবেন।’
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান