সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: মাটির নিচে থাকা তেল ও গ্যাসের জন্য খ্যাতি রয়েছে সিলেটে। প্রাকৃতিক এই সম্পদের পাশাপাশি এখন সিলেট যেন হয়ে উঠেছে সয়াবিন তেলেরও খনি। প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ তেল জব্দ করা হচ্ছে।
শনিবার একদিনেই সিলেট ও মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার লিটার তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এরমধ্যে নগরের দাঁড়িয়া পাড়ার একটি গুদাম থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। দুপুরে দাঁড়িয়া পাড়া এলাকার রসময় স্কুলের পটাশে জনপ্রিয় স্টোর নামের একটি দোকানের গুদাম থেকে এই তেল জব্দ করা হয়। জনপ্রিয় স্টোরির সত্ত্বাধিকারী সুজন রায় রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের ডিলার।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ বলেন, জব্দকৃত তেল পূর্বের দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হবে। এবং মজুদকারী সুজন রায়কে জরিমানা করা হবে।
এরপর বিকেলে নগরের কাজীরবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফটিক স্টোর নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ১২০০ লিটার তেল জব্দ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ জানান, জব্দকৃত তেল ন্যায্যমূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ফটিক স্টোরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে, দুপুরে মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে ৯ হাজার ১৬৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে ভোক্তা অধিদপ্তর। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারের সালাহউদ্দিন ট্রেডার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিপুল পরিমাণ তেল জব্দ করা হয়।
অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম জানান, তেল জব্দ করার দায়ে সালাহউদ্দিন ট্রেডার্সকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া শনিবার হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে উপজেলা সদরের বড়বাজার ও গ্যানিংগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৬শ লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদ্মাসন সিংহের নেতৃত্বে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা সদরের বড়বাজার ও গ্যানিংগঞ্জ বাজারে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানের সময় জব্দকৃত ৬শ লিটার তেল বোতলে লেখা পূর্বের মূল্যে তাৎক্ষনিক ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করার ব্যবস্থা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পদ্মাসন সিংহ।
সয়াবিন তেল মজুদ ও অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির অভিযোগে গত ৮ মে থেকে সিলেটে অভিযান শুরু হয়। শনিবারের পূর্বে পর্যন্ত পাঁচদিনের অভিযানে সিলেট বিভাগের চার জেলা থেকে প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়।
জব্দকৃত তেল ক্রেতাদের কাছে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হয় এবং মজুদকারীদের জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
প্রসঙ্গত, ঈদের পর থেকেই বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিলেটে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তেলের। ব্যবসায়ীরা তেল মজুদ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। অনেকে বিক্রি করছেন বেশি দামে।
গত ৮ মে নগরের কালীঘাট, কাজীরবাজার, লামাবাজার, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও টুকের বাজারে তেলের ডিলারদের গুদাম ও দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ওই মজুদের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রির দায়ে ৭ প্রতিষ্ঠানকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ৯ মে সিলেটে কোন অভিযান চালানো হয় নি। ওইদিন তেল ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
১০ মে নগরের কালীঘাটে অভিযান চালিয়ে মাহের ব্রাদার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে ৫ হাজার টান সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। ওইদিন ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে ওই তেল পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ন্যায্য দামে বিক্রি করা হয়। এছাড়া মাহের এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মাহের আহমদকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
১১ মে নগরের কাজীটুলা এলাকায় ‘কামাল ব্রাদার্স’ নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক কামাল আহমেদের বাসা ৪ হাজার ৬৯৯ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা। ওই তেলও ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এছাড়া কামলা আহমদকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আর বৃহস্পতিবার নগরের শিবগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালালেও তেমন কোন তেলের মজুদ পাওয়া যায়নি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, অনেক ব্যবসায়ী তেল মজুদ করে বাজারে তেলের সঙ্কট তৈরি করছেন। তারা অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করছেন এবং অন্য পণ্য না কিনলে তেল বিক্রি করছেন না। অভিযানে আমরা এসব অপরাধের সত্যতা পেয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান