এসবিএন ডেস্ক:
ছেলেমেয়ের পড়াশোনায় মন নেই। অথবা সবসময় পড়াশোনা করেও কিছু মনে রাখতে পারে না। আর কিছুই মনে রাখতে না পারায় পরীক্ষার রেজ়াল্ট ভালো হয় না। আজকাল বাসে, ট্রেনে সর্বত্র স্কুল পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ শোনা যায় অভিভাবকদের মুখে। সঙ্গে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কিন্তু অভিযোগ ও দুশ্চিন্তা করে আখেরে লাভের লাভ কিছুই হয় না। বরং কীভাবে এই সমস্যার সমাধানা করা যায় সেদিকে মন দেওয়া ভালো। তাই পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে রইল কিছু টিপস্ –
পদ্ধতি ১) নিজের যত্ন নিতে হবে নিজেকেই
* পর্যাপ্ত জল পান – শরীরের শ্রেষ্ঠ ওষুধ হল জল। তাই পড়াশোনার সময় অন্তত এক গ্লাস জল পান করতে হবে। শরীরের প্রয়োজন মতো জলের সাম্যতা বজায় থাকলে একদিকে তা যেমন পড়াশোনায় মনোনিবেশের সয়াহক হবে, অন্যদিকে স্মৃতিশক্তির উন্নতি হবে।
* গুণগত মানের খাদ্যাভ্যাস – মন ভালো রাখতে তথা স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে খেতে হবে ভালো ভালো খাবার। ভালো খাবার মানেই সুস্বাদু ও নামীদামি খাবার নয়। নজর রাখতে হবে খাবারের গুণগত মানের দিকে। সেদিকে খেয়াল রেখে শুরু করতে হবে সময় মতো খাদ্যাভ্যাস।
* স্বাস্থ্যচর্চা – প্রতিদিন নিয়ম করে একবার অন্তত শরীরচর্চা করতে হবে। এতে শরীরে রক্ত চলাচল ভালো হবে। আর রক্ত চলাচল ভালো হলে শরীর ও মন থাকবে ঝরঝরে। ফলে পড়াশোনায় মন বসবে। তবে এমন কোনও নিয়ম নেই, যে প্রতিদিন সকালে উঠে খেলার মাঠে দৌড়তে যেতে হবে। যে কাজ ভালো না লাগে, তা জোর করে না করাই ভালো। তবে তার মানে এই নয়, যে স্বাস্থ্যচর্চা বন্ধ করে দিতে হবে। কারও যদি ভালো লাগে তাহলে নিজের ঘরে গান চালিয়ে সেই ছন্দে একটু শরীর দুলিয়ে নেওয়া। নাচের ছন্দও মন ভালো রাখে। আর মন ভালো থাকলেই অটুট থাকে স্মৃতিশক্তি।
* পর্যাপ্ত ঘুম – স্মৃতিশক্তি ধরে রাখলে রাতে ভালো করে ঘুমাতে হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকলে যেমন গভীর ঘুম হয়, তেমনই গভীর ঘুম হলে বাড়ে মনোবল। আর মনোবল থাকলে যে কোনও কাজই সেরে নেওয়া যায় তুড়ি মেরে। তাই ঘুমের সময় নো টেনশন। নিজেকে ফ্রেশ রাখতে পড়ুয়াদের ৭-৮ ঘণ্টার নিশ্চিন্ত ঘুম বিশেষ জরুরি।
পদ্ধতি ২) পড়াশোনার সময় মন থাকুক সেখানেই
কোন সময়টা পড়োশোনায় মন বসে বেশি, সেদিকে খেয়াল রেখে বানাতে হবে রুটিন চার্ট। পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই তৈরি করতে হবে প্ল্যান। এমনটা যেন কখনই না হয়, পরীক্ষার সময় বই মুখস্থ করে তারপর হলে গিয়ে সেগুলি খাতায় বমি করে দেওয়া। বরং সারা বছর মন দিয়ে পড়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে বিষয়গুলি একবার করে চোখ বুলিয়ে নেওয়াই ভালো। আর পড়াশোনার সময় মন যেন সেখানেই থাকে। তাহলে অল্প পড়লেই মনে রাখতে সুবিধে হবে।
আর পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে একটু করে বিরতি নিতে হবে। একভাবে পড়োশোনার টেবিলে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে না থেকে, পড়ুয়াদের উচিত তার মাঝে ৫-১০ মিনিটের ব্রেক নেওয়া।
পদ্ধতি ৩) পড়াশোনার প্রস্তুতি
ভালোভাবে পড়োশোনা করতে হলে অ্যাজেন্ডা মাফিক এগোনো উচিত। স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যা বলছেন, সেখান থেকে বিশেষ বিশেষ পয়েন্ট পারলে নোট করে নিতে হবে। কবে কী ক্লাস টেস্ট আছে, তা নোট রাখলে আগাম প্রস্তুতি নিতে সুবিধে হবে।
বাড়িতে স্টাডিরুমের উপরেও রাখতে হবে নজর। পড়ার টেবিলে যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে। ঘরের এক কোণের পরিবর্তে খোলামেলা জায়গায় পড়লে তা বেশি ভালো হবে।
সবসময় একা একা হোমওয়ার্ক করতে হবে, এমন কোনও মানে নেই। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে গ্রুপ ডিসকাশনও জরুরি। তাই মাঝে মাঝে বাড়িতে সহপাঠীদের ডেকে তাদের সঙ্গে পড়াশোনার আয়োজন করা যেতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে পড়াশোনা করলে তাতে মানসিক চাপ থাকবে কম। ছাত্রছাত্রীদের যে কোনও কঠিন জিনিসও মনে রাখতে সুবিধে হবে।
নজর থাকুক পড়াশোনার স্টাইলেও। কোন মোডে কীভাবে পড়াশোনা করলে মনে রাখতে সুবিধে হয়, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকেও। কেউ ভিজ়ুয়াল লার্নার হলে তাকে নোটস্ হাইলাইট করতে হবে। অডিটরি লার্নার হলে নোটসের মাঝে মাঝে গান চালানো যেতে পারে।
পদ্ধতি ৪) মাইন্ড সেটিং
ক্লাস রুমে সবসময় প্রথম সারিতে বসার চেষ্টা করতে হবে। যেসব পড়ুয়ারা ক্লাস রুমে আড্ডার মেজাজে থাকে, তাদের এড়িয়ে চলাই ভালো। জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে, পড়ায় মন বসাতে অসুবিধে হবে।