গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি;: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের স্থানীয় সালুটিকর বাজার দামারী পারের বাসিন্দা কথিত বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস উরফে বাবুল কবিরাজ (৬২) এক গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে সালুটিকর তদন্ত পুলিশ। সে দামারি পাড়ের মৃত গনেশ চন্দ্রের ছেলে।ঘটনাটি ঘটেছে বিগত ৪ মে রাত আনুমানিক ১০ টা ৩০ মিনিটে।
এ ব্যাপারে গৃহবধূ বাদী হয়ে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করেন। ধর্ষিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গতকাল তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শ্লীলতাহানির চেষ্টার শিকার গৃহবধূ ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিগত ৩ মার্চ ওই গৃহবধূ তার স্বামীকে নিয়ে কথিত বাবুল কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করাতে আসেন। চিকিৎসা বাবদ তিনি তাকে (বাবুল কবিরাজকে) ২৮ হাজার টাকা প্রদান করে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র নেন। রোগের কোন উন্নতি না হলে তিনি তার সাথে যোগাযোগ করলে তাকে আবার ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। গত পরশু ৪ মে গৃহবধু তার স্বামীকে সাথে নিয়ে ৩৫ হাজার টাকা সাথে নিয়ে আসেন। কথিত বাবুল কবিরাজ তখন তাদেরকে তার বাসায় রাতে থেকে চিকিৎসা করতে হবে বলে বাসায় রাখেন। রাত দশটায় স্থানীয় সালুটিকর বাজার আমিনুরের ফার্মেসি থেকে পুশ করার সেলাইন, ইঞ্জেকশন ও হাতের গ্লাভস সহ চিকিৎসার সরঞ্জামাদি নিয়ে আসেন। গৃহবধূর সাথে ১৭ মাসের এক মেয়ে ও তার স্বামী ছিল তাদেরকে বাইরে যেতে বলেন। গৃহবধূকে অন্য রুমে নিয়ে পরনের কাপড় খুলে চিকিৎসার নামে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। গৃহবধূ বুঝে ফেলেন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। গৃহবধূ নিজেকে শ্লীলতাহানির শিকার হতে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান এবং চিৎকার করেন। চিৎকার শুনে স্বামী দৌড়াইয়া এসে তাকে রক্ষা করেন এবং সালুটিকর বাজার ব্যবসায়ীর সভাপতি শামসুদ্দিন ও বাজার ব্যবসায়ীদের শরণাপন্ন হন। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুদ্দিন তাদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে তাদেরকে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম খানের কাছে নিয়ে যান এবং তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। তখনই ধর্ষণের চেষ্টার শিকার গৃহবধূ বাদী হয়ে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায় গৃহবধূ বর্তমানে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে এবং তার পেটের বাচ্চাও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝুঁকিতে আছে।
সালুটিকর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির বর্তমান সভাপতি শামসুদ্দিন ও সাবেক সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বলেন, বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস কথিত বাবুল কবিরাজ দীর্ঘ প্রায় বিশ পঁচিশ বছর যাবত কবিরাজির নামে এসব অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অভিযোগ আসলে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ও টাকার জোরে বেঁচে যায়। কেউ কিছু বলতে চাইলে তার একটি বন্ধুক আছে সেটি দিয়ে ভয় দেখায়। তারা বলেন বাবুল কবিরাজ কবিরাজি নামে মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে জিরো থেকে হিরো হয়েছে। শুধু তাই নয় কবিরাজির নাম করে মহিলাদের ও অসহায় যুবতী মেয়েদের কে তার বাসায় রেখে অনৈতিক কাজ করেও দীর্ঘদিন থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার একটি সিন্ডিকেট দালাল চক্র আছে যাদের মাধ্যমে সে অসহায় মানুষদের তারা কব্জা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং অনৈতিক কাজও করে। তারা আরো বলেন, সে সব সময় মাদকাসক্ত অবস্থায় থাকে। তারা তার উচিত শাস্তি দাবি করেন এবং বলেন তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এলাকা কুলশিত মুক্ত হলো।
এ ব্যাপারে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস কথিত বাবুল কবিরাজের বিভিন্ন অনৈতিক কাজের কথা শুনে আসছি এবং গোয়েন্দা বিভাগের একটি রিপোর্ট ছিল। সে চিকিৎসার নামে মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয় এবং অনৈতিক কাজ করে।
কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ না থাকায় তাকে আইনের আওতায় আনতে পারছিলাম না। গতকাল সাহসী এক গৃহবধূর ধর্ষণের চেষ্টার শিকার তার অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করবো।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান