সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি;: আর ক”দিন পর ঈদ কিন্তু হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে নেই ঈদের আনন্দ। এক ফসলী বোরো ধান রক্ষার বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্থ এর মধ্যেই কাল বৈশাখী ঝড়ে লন্ডবন্ড ঘর-বাড়ি এযেন মরার উপর খড়ার ঘাঁ।
এদিকে, ঈদে ছেলেমেয়েদের নতুন কাপড় কিনতে না পাড়ার হতাশা কৃষকরা। আছে ফসল ডুবির কারনে গৃহপালিত পশু ও পাখির খাবার নিয়ে মহাবিপদ। অনেকেই আবার বাধ্য হয়ে শেষ সম্ভল গৃহপালিত গরু বিক্রি করছেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বালাইকান্দি, জিনাউড়া, এলিনাকোনা, গলগলিয়া, নোয়াল,কাউয়ার বিল,কাউজ্জাউরি,গাঁওরকিত্তা (ভবানীপুর),কলমা ও শালদিঘাসহ বিভিন্ন হাওর পাড়ের কৃষকদের মাঝে হাওরে বোরো ধান হারিয়ে বিভিন্ন এনজিও, মহাজানের কাছ থেকে আনা সুদে টাকা ও ব্যাংক লোনের কিস্থির টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে সে চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে।
টাংগুয়ার হাওরের বর্ধিত গুরমার বাঁধ ভেঙে বলাইকান্দি হাওর পানিতে তলিয়ে যাওয়া ববানীপুর গ্রামের ৬৫বছর বয়সী কৃষক আবুল হাসানের সাথে হাওর পাড়ে কথা হয়। তিনি জানান,আর কদিন পর ঈদ নতুন কাপড় কিনতেও পারব না নিজের ও ছেলে মেয়ে নাতিদের জন্য। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে তিন হাল(১২ কিয়ারে ১হাল)বোরো জমি চাষ করেছেন। কিন্তু তিনি কাটতে পেরেছেন মাত্র ৮কিয়ার(৩০শতাংশে ১কিয়ায়)। বাঁধ ভেঙ্গে পাকা,আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কিভাবে সুদের টাকা দিব আর সারা বছর সংসার চালাব মাথায় কিছুই আসছে না। ফসল ডুবির কারনে গৃহপালিত পশু ও পাখির খাবার নিয়ে মহা বিপদে আছি।
কাজ্জাউরি হাওরের কৃষক ছিলানী তাহিরপুর গ্রামের দুলা মিয়া(৫০)। তার সাত সদস্যের পরিবার। ১২কিয়ার জমি চাষ করেছেন কিন্তু টাংগুয়ার হাওরের বর্ধিত গুরমার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এক কিয়ার জমিও কাটতে পারেনি। এখন নিজের খাবার ও গুরুর খাবার নিয়ে হতাশ গ্রস্থ। আসছে ঈদে এখন পরিবার পরিজনের কাপড় কেনাও সম্ভবনা। কারন সূদে টাকা এনে এই জমি চাষ করেছেন। এখন সূদের টাকাই দিতে পারছেন না তিনি।
টাংগুয়ার হাওরে নজরখালী বাঁধ ভেঙে ক্ষতি গ্রস্থ জয়পুর গ্রামের কৃষক নুর উদ্দিন (৫৫) ১৬কিয়ার বোরো জমি চাষ করেছেন তার মধ্যে ৩কিয়ার জমি কেটেছেন তাও আবার আধা পাকা।
তিনি জানান,সুদে টাকা এনেছি কিভাবে সুদের টাকা দিব আর সংসার চালাব সেই চিন্তার শেষ নাই। ঈদে ছেলে মেয়েদের কিভাবে নতুন কাপড় কিনে দিব। সরকারী সহায়তা পেলে অনেক উপকৃত হতাম। তাই সরকারী সহায়তার দাবী জানান তিনি। একেই অবস্থা রৌওয়ার হাওরের জয়পুর গ্রামের কৃষক সৈয়দ নুর ৬কিয়ার জমি চাষ করেছেন। কিন্তু বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সম্পূর্ণ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষক নুর উদ্দিন (৫৫),দুলা(৫০),আবদুল মৌলা(৬০),আবুল হাসানেই নয় হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ হাজার হাজার কৃষককের এই অবস্থা।
কৃষক ও কৃষির সাথে সম্পর্কিতরা ও হাওর পাড়ের সচেতন মহল বলছেন, বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা এখন সময়ের দাবী। ফসল ডুবির কারনে গৃহপালিত পশু ও পাখির খাবার নিয়ে মহা বিপদে। প্রতি বছরেই ফসল ডুবি ও কাল বৈশাখী ঝড়ের কারনে ক্ষতিগ্রস্থরা হাওরে কৃং কতব্য বিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। জলবায়ু উদ্ভাস্তুতে পরিনত হচ্ছে। সময় উপযোগী ও পরিকল্পীত ভাবে বাঁধ নির্মান করা এবং কৃষকদের সহযোগিতা করা না হয় তাহলে এক সময় কৃষক খোঁেজ পাওয়া যাবে না। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা পেশা পরিবর্তন করে শহর মুখি হতে বাধ্য হবে।
তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, আমার ইউনিয়নে বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমান বেশি। এর মধ্যে কাল বৈশাখী ঝড়ে ঘর বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করা খুবেই প্রয়োজন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবির জানান, হাওরে ক্ষতি গ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলো আমরা যাচাই বাচাই করে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগনের মাধ্যমে ঝড় ও হাওরে ফসল ডুবিতে ক্ষতি গ্রস্থদের মধ্যে শুকনো খাবারের প্যাকেট, নগদ সহায়তা, জিআর চাল এসেছে তা বিতরণ করব।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান