ইফতি রহমান ;: রমজানের অনেক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই মাসে লাইলাতুল কদর (ভাগ্যের রাত) থাকার সম্ভাবনা আছে। লাইলাতুল কদরের অর্থ বিচারের রাত। বছরে একটি বিশেষ রাত রয়েছে, যেদিন মহান আল্লাহ বার্ষিক সিদ্ধান্ত নেন।
এই রাতটি রমজানের শেষ দশ দিনের (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখ) বেজোড় রাতগুলির মধ্যে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে। এই রাতের ইবাদত এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, কুরআনে একে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম বর্ণনা করা হয়েছে।
এ রাত সম্পর্কে কুরআনের একটি সম্পূর্ণ সূরা, সূরা কদর নাজিল হয়েছে। এর অনুবাদ হলো: আমি কুরআনকে মহিমান্বিত রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানো মহিমান্বিত রজনী কি? মহিমান্বিত রজনী হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। ফেরেশতা এবং রূহ (জিবরাইল) এ রাতে তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে সকল নির্দেশ নিয়ে নেমে আসে। এই রজনী শান্তির রজনী, উষার আবির্ভাব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
সম্ভবত সেই রাতে অনেক ফেরেশতা নেমে আসে। এমনকি পৃথিবীতে ফেরেশতাদের ভিড় হয়ে যায়। সেজন্য সেই রাতে পৃথিবীতে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি হয়। যে সমস্ত লোকেদের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা আছে এমন লোকেরা এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর কারণে তাদের কথা ও কাজে অসাধারণ ঐশ্বরিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থার কারণে এই রাতে তাদের আমলের কদর অনেক বেড়ে যায়।
হজরত আয়েশা (রা.) রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, লাাইলাতুল কদর পেলে আমি কীভাবে দোয়া করবো?
তিনি বলেছিলেন, এইভাবে বলবে: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু’উন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”। (জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩৫১৩) অর্থাৎ, হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল এবং আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।
এর দ্বারা অনুমান করা যায় যে মহান আল্লাহর কাছে চাওয়ার সবচেয়ে বড় জিনিস কী। আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় জিনিস হলো ক্ষমা। ক্ষমা হলো সেই জিনিস যা মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় সুখের দরজা খুলে দেয়। তা মানুষকে অনন্ত জান্নাতে নিয়ে যাবে। তাহলে সর্বোত্তম সময়ে সব থেকে ভালো চাওয়ার জিনিস ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কী হতে পারে?
রমজান মাসের অন্যতম ইবাদতকে ইতিকাফ বলা হয়। অর্থাৎ মাসের শেষ দশ দিন বা তার কম বা বেশি সময় মসজিদে থাকা। এই ইতিকাফ রমজানের সাধারণ আমল থেকে আলাদা কিছু নয়। এটি রমজানের সাধারণ অনুশীলনের সবচেয়ে ঘনীভূত রূপ। একজন রোজাদার ব্যক্তি রমজানের দিন ও রাতে যা করে তা আরও আন্তরিকতা ও যত্ন সহকারে করার জন্য সে তার পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কয়েকদিন মসজিদে থাকে।
ইতিকাফের সময় রোজাদার ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করে। সে নফল নামাজ পড়ে। সে আল্লাহকে স্মরণ করে। সে আল্লাহর প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হয়। এই ব্যস্ততার ফলে তার রোজা আরও প্রাণবন্ত হয়। যখন সে ইতিকাফ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন সে নতুন এক আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তিত্ব হয়ে বেরিয়ে আসে, যার প্রভাব একজন ব্যক্তির উপর মাসের পর মাস স্থায়ী হয়, যে ইতিকাফের সময় যেভাবে মসজিদের বাইরে দুনিয়ার মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকে, সে নিজের পুরো জীবনে মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়।
রোজার মাস শেষ হওয়ার পরের দিন হলো ঈদের দিন। ঈদের দিন মুসলমানরা দুই রাকাত বিশেষ নামাজ পড়ে, নতুন কাপড় পরে. অবাধে খাওয়া-দাওয়া করে, বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে দেখা করে। রোজার দিনগুলো যেমন সংযমের দিন ছিল, তেমনই ঈদের দিন মুসলমানদের জন্য খুশির দিন।
এটি দুটি অবস্থার প্রতীকী অভিজ্ঞতা। এক, পৃথিবীর অবস্থা, আর দ্বিতীয়ত পরকালের অবস্থা। দুনিয়া মুমিনের জন্য সংযমের সময়কাল এবং আখেরাত মুমিনের জন্য মুক্তির সময়কাল।
রমজান মাসে তাকে শেখানো হয় বর্তমান পৃথিবীতে কীভাবে বাঁচতে হবে। ঈদের দিন তাকে আংশিক অভিজ্ঞতা দেওয়া হয় পরলোকের জীবনে তার জীবন কেমন হবে। রোজা হলো আমলের সময়কালের প্রতীক আর ঈদ হলো পুরস্কারের সময়কালের প্রতীক।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান