সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি;: সুনামগঞ্জে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হাওর। তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর জমির আধাপাকা ধান। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। রোববার সকালে তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরের বর্ধিতাংশের বাঁধটি ভেঙ্গে যায়, আর সন্ধ্যায় ভেঙ্গে গেছে দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের হুরামন্দিরা হাওরের বাঁধ।
সোমবার আরো অনেক হাওরে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। তলিয়ে যাওয়া হাওরগুলোর ফসলহানিতে কৃষকের হয়েছে সর্বনাশ। বিশাল হাওর এলাকায় যেদিকে তাকানো যায় কেবল থৈ থৈ পানি। অন্যান্য হাওরগুলোতে আধাপাকা ধান কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন কৃষকেরা। অন্যদিকে হাওর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন অনেকে। তাদের সাথে রয়েছেন প্রশাসনের লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা।
গুরমার হাওরে ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান দিনের বেলাতেই চোখের পলকে তলিয়ে গেছে। অপর দিকে দিরাই উপজেলার হুরামন্দির হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ৩ হাজারের বেশি হেক্টর জমির আধা পাকা ধান, এমনটাই দাবি হাওর পাড়ের বাসিন্দা জনপ্রতিনিধি ও কৃষক পরিবারের।
তবে পাউবোর আর কৃষি অফিসের লোকজন বলছে দুই হাওরের ধান ইতিমধ্যেই ৫০ ভাগ কাটা হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কম আছে। যদিও এই তথ্যের কোনো বাস্তবতা নেই বলে মনে করেন কৃষকরা। তারা বলছেন, হাওরের ধান এখনো আধাপাকা রয়েছে।
জানা যায়, গত ১৫ দিন ধরে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের গুরমার বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করছিলেন স্থানীয় কৃষক, জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা। তবে রোববার বিকেল ৩টার দিকে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের পাশের অংশে বাঁধটি ভেঙ্গে যায়। এতে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান ছিল। আর রাত সাতটার পর দিরাই উপজেলার হুরামন্দির হাওর প্রকল্পের সাতবিলা রেগুলেটর সংলগ্ন ৪২ নম্বর পিআইসি’র বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। এলাকার লোকজন বলছেন, হুরামন্দিরায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রয়েছে। হুরামন্দিরা হাওরে মাত্র ৩০ শতাংশ ধান কাটা সম্ভব হতে পারে।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের বর্ধিত বাঁধে এবার ১৩টি পিআইসি কাজ করেছে। বরাদ্দ ছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা। রোববার সকালে হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি প্রবেশ করতে থাকে।
গুরমার হাওরপাড়ের কৃষকরা জানান, সকালে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। পরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে পাটলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্ধিত গুরমার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ২৭ নং প্রকল্পটি দেবে পানি ঢুকেছে হাওরে। ১৫ দিন ধরে হাওরের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেও শেষ রক্ষা হয়নি। ফলে গুরমার হাওরে দুই উপজেলার ২০-২৫ গ্রামের কৃষকদের প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেল।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবীর জানান, পাটলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গুরমার হাওরের বাধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে। ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন বাঁধে মাটি ও বাঁশের চাটাই দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছি আমরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী এ টি এম মোনায়েম জানান, গত রাতে হুরামন্দিরা হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকতে থাকে। তবে এ হাওরে প্রায় ৫০ ভাগ ধান ইতোমধ্যেই কেটে ফেলা হয়েছে।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান