নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আওয়ামী লীগের মেয়র পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন । মাঠে আছেন সবাই । প্রচার প্রচারনায় কেউ মসজিদ কেন্দ্রীক, কেউ পোষ্টার লিফলেটে, কেউ ডিজিটাল ক্যাম্পিং এ, আর কেউ কেউ নিরবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ।
নির্বাচনের বাকি এখনও প্রায় ১ বছর । হাতে যথেষ্ট সময় নিয়েই প্রার্থীরা শুরু করেছেন প্রচারণা । একাধিক প্রার্থী থাকায় দলেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি । পদ পদবি ব্যবহার করে কেউ কেউ তৃণমূলের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে । এনিয়েও নানা কথা শোনা যাচ্ছে । বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নেতাদের রক্তচক্ষু দেখিয়ে নিজের পক্ষে রাখার চেষ্টাও চলছে, কেউ কেউ এমন অভিযোগও করেছেন ।
বিগত দিনে সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান । তাঁর মৃত্যুতে এবার নতুন মুখ হিসেবে কে দলটির মনোনয়ন পাবেন তা নিয়েও আছে নানা জল্পনা কল্পনা । সাবেক ৩ বারের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের সর্বমহলে পরিচিত মুখ এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ নৌকা পাচ্ছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে । মহানগরের সাবেক সাধারন সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের উপরও নির্ভর করছেন অনেকে, তিনি গত নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি মাঠে কাজ করছেন । সহ সভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলাওর এর নাম আলোচনায় থাকলেও তার দৃশ্যমান কোন তৎপরতা নেই ।
নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছেন মহানগরের বর্তমান সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, তবে তার সম্পর্কে তৃণমূলে অনেক নেতিবাচক কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে । বর্তমান দুই যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ নিজেদের মত করে কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন । জেবুল তার বন্ধু বান্ধবদের উপর নির্ভর করেই প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছেন । আজাদুর রহমান আজাদ গত নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন, পাশাপাশি সিটি কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে ও মন্ত্রী বলয়ের লোক হিসেবে প্রচার প্রচারণায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন । সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিধ হিসেবে তৃণমূলে তার একটি গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে, তিনি এই পরিচ্ছন্ন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন, তার ডিজিটাল প্রচার প্রচারণার ধরন অনেককেই আকৃষ্ট করছে । বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক কামরানপুত্র আরমান আহমদ শিপলু তার বাবার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে আলোচনায় থাকলেও তৃণমূলে খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর দক্ষিন সুরমার একটি ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, শুধু তৃণমূলের কাঁধে ভর করে নির্বাচনী বৈতরনী পার করা যাবেনা, নির্বাচন করতে হলে আগে মহানগরকে শক্তিশালী করতে হবে । সম্মেলনের পর দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও মহানগরের দৃশ্যমান বড় কোন কর্মসূচি নেই । কিন্তু নের্তৃত্বের অনক্য দৃশ্যমান । নগরীর পূর্বাঞ্চলের আরেকটি ওয়ার্ডের সভাপতি মনে করেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আর আসাদ উদ্দিন আহমদ ছাড়া যারাই প্রার্থী হচ্ছেন তারা সবাই তৃণমূলের সাথে সম্পৃক্ত ও পরিচিত থাকলেও মেয়র হওয়ার মত অভিজ্ঞতা নেই কারোরই । নির্বাচনে জয়ী হতে হলে আমাদের একজন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান দরকার ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ডের অনেক নেতাকর্মীই শংকা প্রকাশ করে বলেন, বিগত দিনে দলে ঐক্য ছিলো, কামরানের মত একজন জনপ্রিয় প্রার্থীও ছিলেন, নির্বাচনও ছিলো ২৭টি ওয়ার্ডে । তারপরও আমরা জিততে পারিনি । এবার নির্বাচন হবে আরও বড় অংশে প্রায় ৫৬টি ওয়ার্ডে । কাজেই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্ভন না করলে আবারও ভরাডুবি ঘটবে । নেতাদের উচিত কোন্দল কমিয়ে দলকে সুসংহত করা । নির্বাচনের এক বছর আগেই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে তা কোনভাবেই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয় ।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর সভাপতি মাশুক উদ্দিন আহমদ বলেন, যেহেতু প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত নয় কাজেই নিজেদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হওয়া দলের জন্য ক্ষতিকর । তিনি মনে করেন, প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে, এটাও গণতান্ত্রিক চর্চার একটি অংশ । দল থেকে এখনও কোনো প্রার্থীকে এককভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়নি । সে হিসেবে দলীয় কর্মীদের কেউ এককভাবে ব্যবহার করতে পারেন না । তিনি বলেন, প্রচারণা যে কেউ চালাতে পারে ব্যক্তিগতভাবে । প্রচারণা বিষয়ে দলীয় কর্মীদের ব্যবহার নিয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি । বিষয়টি অবশ্যই কেন্দ্রকে জানানো হবে । তিনি আরও বলেন, আমরা বিভক্তি চাইনা, ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী সিটি নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে চাই ।