সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট—২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ রবিবার। সপ্তাহ। মাস। বছর। দেখতে দেখতে এভাবে ডায়েরীতে থেকে ৩৬০০টি দিন চলে গেছে। দীর্ঘ দিনেও সিলেটের বিএনপির এ নেতার খোঁজ পাওয়া যায়নি! সাধারণ মানুষের মনে এখন একটি প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে। এ অপেক্ষার শেষ কোথায়? এ প্রশ্নের সদোত্তর দিতে পারছে না কেউ।
নিখোঁজের ঘটনার উদ্ধার তৎপরতাও থেমে গেছে। দিনে দিনে সবকিছু যেন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। সিলেটের বিএনপির প্রভাবশালী এ নেতাকে সরকার গুম করে রেখেছে এমন অভিযোগ শুরু থেকেই করে আসছে বিএনপি। তবে সিলেটের মানুষ আজও ভুলেনি তাদের নেতা ইলিয়াসকে। তাঁর সন্ধান কামনায় চলছে মিলাদ—দোয়ামাহফিল। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আনসার নিখোঁজ হন। দীর্ঘ ১০ বছরের মাথায় এসেও কান্না থামেনি ইলিয়াস পরিবারসহ দলীয় নেতাকর্মীদের। ইলিয়াস মাতা সূর্যবান বিবি পুত্রের জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি এখন শুকিয়ে গেছে। টিক মত চলা ফেরা করতে পারছেনা তিনি। কারো কাছে তাঁর এখন কিছু বলা বা চাওয়ার নেই। চোখে মূখে ক্ষোভ আর হতাশার চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবুও নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাঁর পরিবার, নিজ দলের নেতাকমীর্রা ও বিশ্বনাথের সর্বস্থরের মানুষ।
ইলিয়াস আলীর মতো একজন প্রভাবশালী উদীয়মান তরুণ রাজনীতিবিদ নিখোঁজ হওয়ার পেছনের কারণও আজোও জানাতে পারেনি কেউ। সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীর সন্ধান কি আর পাওয়া যাবে? এক ইস্যুতে অন্য ইস্যু চাপা পড়ার মতো ধীরে ধীরে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে ইলিয়াস ইস্যুও। অপেক্ষা করতে করতে পেরিয়ে গেল ১০টি বছর। কিন্ত শেষ হচ্ছে না অপেক্ষার প্রহর। কবে শেষ হবে এই অপেক্ষার পালাক, কবে ফুঁটবে ইলিয়াস আলী ও আনসার আলীর পরিবারের মুখে হাসি এই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়া গেছে এমন একটি ব্রেকিং নিউজ টিভি’র পদার্য় দেখার জন্য এখনও টিভি’র সামনে বসে থাকেন অনেকেই।
অপরদিকে, বিশ্বনাথ বিএনপি আর আগের অবস্থানে নেই। নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সঙ্গেও যেনো হারিয়ে গেছে বিএনপির অবস্থান। এক সময় বিশ্বনাথের রাজপথে জোরালো অবস্থান ছিল বিএনপির। বিএনপির জোরালো অবস্থানের কাছে অন্যদলগুলো যেনো অসহায় ছিল। এখন বিশ্বনাথে খেই হারিয়ে ফেলেছে দেশের অন্যতম এই রাজনৈতিক সংগঠনটি। আর এসবের মূলে রয়েছেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি দিন দিন দলে বেড়েছে মতপার্থক্য, রেষারেষি। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বনাথ উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে আগামী মঙ্গলবার প্রতিবাদ সভা, মিলাদ ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে এবং ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড লাগিয়েছেন।
ইলিয়াস জীবিত না মৃত এ নিয়ে গত ১০ বছর থেকে আলোচনার ঝড় বইছে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সারা দেশে। কিন্তু ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও ইলিয়াসের সন্ধান মেলেনি। সিলেটবাসীর বিশ্বাস, জনতার ইলিয়াস আবার জনতার কাছে ফিরে আসবেন। সাময়িকভাবে হয়তো তাকে বন্দি, আটক বা গুম করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আবার ফিরে আসবেন। ইলিয়াস নিখোঁজের পর সিলেটসহ দেশের সর্বত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে রাজপথে নেমে আসেন দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। ইলিয়াসের সন্ধানের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল ইলিয়াসের জন্মস্থান সিলেটের বিশ্বনাথে হরতাল চলাকালে উপজেলা সদরের থানা ঘেরাও করতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেঁধে মিছিল সহকারে উপজেলা সদরের দিকে এগোতে থাকেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় মিছিলকারীদের পুলিশ বাঁধা দিলে ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বিশ্বনাথে স্মরণকালের ভয়াবহ সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হয় মনোয়ার, সেলিম ও জাকির। আহত হন অনেকেই। ওই সংঘর্ষে বিক্ষুব্ধ জনতা উপজেলায় হামলা—ভাংচুর করেছিল। এতে উপজেলা পরিষদের ১৯টি দফতরের ১ কোটি ৬২ লাখসহ প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় বিশ্বনাথে বিএনপি—জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করে দায়ের করা হয় ৬টি মামলা। এসব মামলায় বিশ্বনাথের জনপ্রতিনিধি, বিএনপি—জামায়াতের নেতাকর্মী ও অনেক সাধারণ মানুষসহ প্রায় ১৮ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছিল। তৎকালিন ৬ ইউপি চেয়ারম্যানসহ শতাধিক নেতাকর্মী কারাবরণ করেন। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবার এখনও আশাবাদী তিনি আবার ফিরে আসবেন। সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবি। তিনি পুত্র শোকে কাতর। অনেকটা শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তার প্রিয় পুত্রের জন্য।
ইলিয়াস নিখোঁজের দু’বছর পূর্তির একদিন আগে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদী লুনা অভিষিক্ত হলেন সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে। পুরনো কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটিতে ১নং সদস্য করা হয়েছিল লুনাকে। লুনার রাজনীতিতে অভিষেকে উল্লসিত ইলিয়াস অনুসারীরা। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর তাঁর নিবার্চনী এলাকা সিলেটের ওসমানীনগর—বিশ্বনাথ বিএনপির হাল ধরেন ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদি লুনা।
জানাগেছে, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর কেন্দ্রীয় বিএনপির আহবানে সিলেটের বিশ্বনাথ—ওসমানীনগর উপজেলায় ইলিয়াস আলীর ইমেজ ধরে রাখতে মাঠে নামেন ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদি লুনা। স্বামীর অবর্তমানে দলের হাল ধরেন তিনি। তাহসিনা রুশদীর লুনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি রেজিষ্ঠার। যার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সুযোগ্য সহধর্মিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের সাবেক এজি এস তাহসিনা রুশদীর লুনা,স্বামী ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বাংলাদেশ রাজনীতিতে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন তিনি। তাহসিনা রুশদি লুনা সিলেটের বিশ্বনাথের গৃহবধু। তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্ঠা।
নিখোঁজ ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, গত ১০ বছরেও কোনো সুসংবাদ পাইনি। মহান আল্লাহর কাছে প্রতিদিন সাহায্য চাচ্ছি ইলিয়াসের জন্য। একমাত্র আল্লাহই পারেন ধৈর্যের প্রতিদান দিতে। আমি আমার স্বামীকে যে কোনো মূল্যে ফেরত পেতে চাই। তাকে ফিরে পেতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত। শুধু আমি নই, আমার মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল তার বাবার জন্য ব্যাকুল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সে হতাশ। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, মা অনেক দিনতো হয়ে গেল তারপরও বাবা ফিরছেন না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারি না।
লুনা বলেন, ইলিয়াস আলীর নিজ এলাকায় বিএনপি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ইলিয়াস আলীর ভালবাসার কারণে এলাকার অসংখ্য নেতাকমীর্ নানাভাবে নিযার্তিত হয়েছেন। মাঝে মাঝে তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে এবং তাদের প্রয়োজনে এলাকায় আসা হয়।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান