সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের হামহামির ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধ রক্ষায় চারদিন ধরে লড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা। প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠায় রবিবার স্লইসগেটে বিকল্প আরেকটি মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
গত শনিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এই বাঁধটি পরিদর্শন করে প্রকল্প রক্ষায় সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
হাওরপারের কৃষকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নলুয়া হাওরের পোন্ডার— ১ এর আওতাধীন চার নম্বর প্রকল্পের হামহামি বাঁধে ফাটল দেখা দিলে স্থানীয় এলাকাবাসি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে মেরামতের কাজ শুরু করে বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে বাঁধটি রক্ষা করেন। শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে ফের বাঁধের মাটি ধসে পড়লে বাঁধটি রক্ষায় লড়াইয়ে নামেন তিন শতাধিক কৃষক। এরপরও এ বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে বিকল্প আরেকটি বাঁধে গতকাল থেকে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া কামারখালী নদীর তীরে অবস্থিত হামহামির বেড়িবাঁধটির দুই পাশে মাটি ও বাঁশ পুেঁত বেড়া দেয়া হয়েছে। বাঁধের একপাশের মাটি ও বাঁশের বেড়া ধসে পড়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে বস্তায় বালু ভরে বাঁশ দিয়ে কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে এলাকার কয়েকজন কৃষকও স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
এসময় কথা হয় স্থানীয় কৃষক সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই জায়গায় সঠিকভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় বাঁধের দুই পাশের মাটি সরে গেছে।
চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কৃষক নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, টানা চারদিন ধরে হামহামির বেড়িবাঁধে আমরা হাওরপারের মানুষ দিনরাত স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় লড়ছি। এ বাঁধটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে বিকল্প আরেকটি বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে।
তাঁর অভিযোগ, এবার কয়েকটি বাঁধে নিম্নমানের কাজ করায় বাঁধগুলো দুর্বল হওয়াতে বৃষ্টি ও পানির চাপে এসব বাঁধ ফাটল ও ধসে পড়ছে। হামহামি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি আহমেদ আলী বলেন, পাউবোর নীতিমালা অনুয়ায়ী বাঁধের কাজ করেছি। নদীর পানির চাপে বাঁধের একটি অংশ ধসে গেছে। আমি বাঁধটি টেকসই করতে বস্তা, বাঁশ লাগিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি জানান, ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পে এখন পর্যন্ত বিল পেয়েছি সাত লাখ টাকা। ধার দেনা করে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে বাঁধের কাজ করেছি।
চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে হাওরের ফসলরক্ষায় বাঁধ রক্ষায় লড়ছেন স্থানীয়রা। তাঁরা দিনরাত কাজ করছে বাঁধে। ফসল হারানোর ভয়ে ঘুম নেই কৃষকের চোখে। তিনি বলেন, হামহামির ঝুঁকিপূর্ণ এই বেড়িবাঁধের পাশে স্থাপিত স্লুইসগেটটি কোন কাজ করছে না। এখন ওই স্লইসগেটে বিকল্প আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহে নলুয়া হাওরে ৮টি ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ ধসের ঘটনা ঘটেছে। কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বাঁধগুলো রক্ষা করছেন। তিনি বলেন, শুরুতে দায়সারা কাজ করায় হুমকির মুখে পড়েছে ফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন, ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধ রক্ষায় মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে। ঝুঁকির বাঁশের পাশে আরেকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, হামহামি বেড়িবাঁধসহ ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পগুলো আমরা সার্বক্ষনিক তদারকি করছি।
সিলেট৭১নিউজ/আইআর/জেবি