সিলেট৭১ ডেস্ক:; নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ ফিরোজ খান মঞ্জিল নিয়ে এবার মুখ খোললেন মরহুম ফিরোজ খানের জামাতা আরিফ আহমদ। তিনি বলেন, গিয়াস উদ্দিন বিভিন্ন সময়ে ওই জায়গা দখলের প্রচেষ্ঠা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করবে মর্মে বিভিন্ন লোক মাধ্যমে আপোস প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রস্তাব কিংবা অশুভ চক্রের সাথে আপোসহীনতার মনোভাব ব্যক্ত করায় গিয়াস উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তিনি বলেন, দোকান কোটা যদি গিয়াস উদ্দিনের কাছে বিক্রয় করা হতো-তাহলে এতো নাটকীয়তা কেন ? আদালত কিংবা প্রশাসনই কাগজপত্র যাচাইসাপেক্ষে দোকানকোটা গিয়াস উদ্দিনকে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দিত। কিন্তু আদালত মিথ্যাচারের জায়গা নয়, বিধায় যেকোনো মূল্যে ফিরোজ খান মঞ্জিল দখলে নিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে গিয়াস উদ্দিন।
আরিফ আহমদ বলেন, ১৬ মার্চ প্রথমে ফিরোজ খান মঞ্জিলের সামনে বালুর স্তুপ। ফিরোজ খান মঞ্জিলের ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ। বাসার সামনে সকাল থেকে গভির রাত পর্যন্ত লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে মহড়া। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের উপর মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়ে বাড়ি পুরুষ শুন্য করা। জাল দলিল সৃজণের মাধ্যমে ভূমি দখল। নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ ফিরোজ খান মঞ্জিলে বিরতীহীন ভাবে গিয়াস উদ্দিন চক্রের তান্ডব চললেও নির্বিকার প্রশাসন। ঘটনাস্থল একাধিকবার পরিদর্শন করলেও ফিরোজ খান মঞ্জিলে থাকা মহিলাদের আর্তি পৌছেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্ণে। পুরুষ শুন্য ফিরোজ খান মঞ্জিলের উত্তরাধীকারী মহিলারা বারবার ধর্না দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। ভূমি রক্ষায় সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্টদের দপ্তরে। কিন্তু অদৃশ্য আঁতাতের কাছে ফিরোজ খান মঞ্জিল রক্ষায় এগিয়ে আসেনি কেউই।
তিনি ঘটনার সুবিচার চেয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী , সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মামলায় আসামী শুধু পুরুষরাই নয়, ফিরোজ খানের কন্যাদেরসহ দোকানের ভাড়াটিয়াদেরও আসামী করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ফিরোজ খান মঞ্জিলের উত্তরাধীকারদের চোখে মুখে কেবল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। টানা ২৩ দিন শেষেও প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) ফিরোজ খান মঞ্জিলের উত্তরাধীকার আরিফ আহমদ কান্না বিজড়িত কণ্ঠে এভাবই বর্ণনা করেন নারকীয় ঘটনার। তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগীতা পাইনি। দুর্বলের আর্তি যেখানে পৌছে না, সেদেশে সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা হতে ব্যর্থ। তিনি বলেন, কোন শক্তির বলে গিয়াস উদ্দিন গং আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারে?
আরিফ আহমদ বলেন, সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার জেএলনং ৯১সহ ৫টি দাগও খতিয়ানভূক্ত ১০২ শতক ভূমির মালিক আমাদের পিতা মরহুম ফিরোজ খান। ক্রয়সূত্রে ১৯৬৬ ইংরেজি থেকে ১৯১০৯ নং দলিলমূলে রেজিষ্ট্রারি মালিক স্বত্ববান হইয়া ওই ভূমিতে বসবাস করে আসছি। পরবর্তীতে মোট ভূমির ২৫ শতক ভূমিতে ১৯৮৮ ইংরেজিতে তৎকালীন সিলেট পৌরসভার অনুমোদনক্রমে এবং নকশা মতে দ্বিতল মার্কেট তৈরি করে মোট ১১ টি দোকানকোটা নির্মান করে বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া প্রদান করা হয়।
ফিরোজ খানের কন্যা রায়হানা বেগম বলেন, ২৫ শতক ভূমিতে নির্মিত দোকানকোটার উপর চোখ পড়ে শাহী ঈদগাহস্থ ন্যাশনাল মেগা শপের মালিক ও ঈদগাহস্থ বাজার কমিটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গং এর। তিনি ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ৮৬০৭ নং জাল দলিল সৃজণ করেন। পরবর্তীতে ২৯ মে ২০১৯ ইংরেজি তারিখ বিকেলে মার্কেট দখলের জন্য গিয়াস উদ্দিন গং লাঠিয়াল বাহিনী সঙ্গে নিয়ে মার্কেট ভাঙচুর করত, দোকানের সমুদয় মালামাল ট্রাকযোগে নিয়ে যান। যে ঘটনাকালীন সিলেটের সকল গণমাধ্যম কর্মীরা আমাদের পাশে ছিলেন। সকল গণমাধ্যমে সে সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে। পরবর্তীতে মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত সিলেট ও দায়েরকৃত ৮৫/১৯৯৭ ইং মোকদ্দমা স্বত্ব ৭৬/২০০৪ মোকদ্দমা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আক্তারুজ্জামান পাঠান কাগজপত্র এবং বৈধ ভোগ দখলীয় মালিক বলে ফিরোজ খানের উত্তরাধীকার গণের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২৯ আগষ্ট ২০১৯ ইংরেজি তারিখে মাননীয় আদালত ওই ভূমিতে পরবর্তী স্বত্ব মামলার রায় পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারী করেন।
কিন্তু আদালতের নির্দেশ পরবর্তী আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন গং একের পর এক লাঠিয়াল বাহিনী নিযুক্ত করে উল্লেখিত ভূমি দখলের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে এমনকি আমাদের উপর ভয়-ভীতি ও হুমকী অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন,বর্তমানে এই ঘটনার আমরা শঙ্খিত। একই সাথে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। আমরা সিসিক মেয়র, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে ফিরোজ খান মঞ্জিল রক্ষা ও আমাদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করি।