November 19, 2024, 1:35 am

সংবাদ শিরোনাম :
সেইলরের নতুন পূজা কালেকশন সেজে উঠুন আপনিও রুদ্র নিহতের ঘটনায় সিলেটে মামলা, আসামি ৩ শতাধিক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের পরিচয় আসাদুজ্জামান ও ওবায়দুল কাদেরর নিষেধাজ্ঞা দিতে আহ্বান মার্কিন কংগ্রেসের ৬ সদস্যের নোবেলজয়ী থেকে সরকার প্রধান কে এই ড. ইউনূসের বড়লেখাবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানালেন সমাজসেবক সাইদুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রবাস খাঁদে”পুলিশেরে সাহসী ভূমিকায় বেঁচে গেল ১১ টি প্রান” সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বর্ষায় বাড়ছে রোগবালাই আগামীকাল সিলেট ফিরছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান বাজেটে বাড়ছে বিড়ি-সিগারেটের দাম প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীকে সমর্থন নাইডু ও নীতিশের হুয়াওয়ের ‘উইমেন ইন টেক’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা সিলেটে অবৈধভাবে আসা ২ কোটি টাকার ভারতীয় চিনি জব্দ সিলেট মহানগর যুবলীগের ৪ নং ওয়ার্ড কমিটি গঠন”সভাপতি পদে শাকিল নির্বাচিত চোরাচালান লাইনম্যান রুবেল আহমদ বেপরোয়া জমির ধান নষ্ট করে দিলো প্রতিপক্ষ: দিশেহারা কৃষক সিলেটে ইট ভাটা নিয়ে নজিরবিহীন কেঙ্ককারী বিশ্ব গাজায় হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছে, বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না : প্রধানমন্ত্রী সুজানগর ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কমিটি গঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত মাওলানা লুৎফুর রহমানের মৃত্যু ”গুজব সংবাদ ফেসবুকে” বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বিজিবির নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে সচিবদের :প্রধানমন্ত্রীর সিলেটে বিজয় দিবসে গানের অনুষ্ঠানে সংঘর্ষ:নিহত-১ বইমেলা বাঙালি জাতিসত্তা দাঁড় করাতে সহায়ক : কবি নুরুল হুদা বন্ধুকে বিদেশ পাঠানোর সহযোগীতায় বন্ধু খুন দুর্নীতি-অনিয়ম র অভিযোগে ডৌবাড়ী প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্টের ৪ সদস্য বহিষ্কারের অভিযোগ ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী গোয়াইনঘাটের শীর্ষ কুখ্যাত চোরাকারবারী কালা মিয়া
ইসলামের বহুমুখী খেদমতে চির স্মরণীয় সিলেটের আল্লামা বর্ণী (রহঃ)

ইসলামের বহুমুখী খেদমতে চির স্মরণীয় সিলেটের আল্লামা বর্ণী (রহঃ)

Please Share This Post in Your Social Media

মো: মাহফুজুর রহমান :: হাজারো ওলীর চারনভূমি, সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের মানব মানবীরা যখন অমানিশার ঘোর অন্ধকারে আবদ্ধ ছিল, মানবতা যখন গৌরগোবিন্দ ও তার দুষরদের কাছে জিম্মি, যুগের সে ক্লান্তি লগ্নে মানবতাকে তাদের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি দিতে বিশ্ব বরেণ্য ওলী হযরত শাহজালাল (রহ.) তাঁর ৩৬০ জন সঙ্গী নিয়ে পদচারণা করেছিলেন পূন্যভূমি সিলেটে।

হযরত আল্লামা আব্দুর রহমান বর্ণী রহঃ ছিলেন হযরত শাহজালাল রহঃ এর জীবন থেকে দীক্ষা নেয়া আধ্যাতিক ব্যক্তিত্ব। শুধু তাই নয় আল্লামা বর্ণী (রহ.) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন বাঙ্গালী শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর গোটা জীবন ইলমে দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে আল্লাহর রাহে হাদীয়া করে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহঃ এর হাতেগড়া শিষ্য এবং খলীফাহ।

আল্লামা বর্ণী রহঃ শুধু একজন ব্যক্তিই নন, তিনি ছিলেন অনুসরণীয়, অনুকরণীয় ও হৃদয়ে বরণীয় ব্যক্তি। জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের হৃদয়ের আকর্ষণ ও মধ্যমণী। সুদীর্ঘ ৭০ বছরের জীবনে তার বহুমুখী প্রতিভা, কর্ম দক্ষতা এবং সহজ সরল নিরহংকার ও ধর্মীয় জীবন সাধনায় তাকে খ্যাতির শীর্ষে আরোহনে সহায়তা করেছে।

আল্লামা (বর্ণী)রহ..এর ‘জীবন’ ইতিহাসের এক বিস্ময়কর স্বর্ণজ্জ্বোল অধ্যায়। তাছাড়া তাঁর ইলম, তাকওয়া, আখলাক মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুসরণীয় আদর্শ, তাই দ্বীন ও মিল্লাতের প্রয়োজনেই আল্লামা বর্ণী (রহ.) কে জানা দরকার। তাকে অন্তরঙ্গভাবে জানা এবং উত্তর প্রজন্মের মধ্যে উদ্যমশীলতার প্রাণময়তা ফিরে আসে এই আশায় তাঁর জীবনের কিছু তথ্য এখানে আলোকপাত করা হলো।

জন্ম ও পরিচয়ঃ
আল্লামা বর্ণী (রহ.) ১৯৩২ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার ১১ নং লাউতা ইউনিয়নে টিকরপাড়া গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম ইছরাব আলী। তিনি ছিলেন খুব পরহেজগার ও আল্লাহ ওয়ালা। পাঁচ ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট। ১৯৪৪ সালে তাঁর পিতা কর্তৃক টিকরপাড়া বাড়ি বিক্রি করে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার বর্ণী গ্রামে বাড়ি ক্রয় করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে নিজে বর্নীর বাড়ি বিক্রি করে একই থানাধীন রহমানিয়া টুকা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আব্দুর রহমান, বর্ণী গ্রামে বসবাস করায় তিনি বর্ণীর হুজুর নামে পরিচিত।

বাল্যকালঃ

বাল্যবয়সেই আল্লামা বর্ণী (রহ.) ছিলেন চঞ্চলতা মুক্ত সহজ সাবলীল এক মানুষ, তিনি ছিলেন পিতা মাতার অত্যন্ত আদরের, খেলাধুলা, হাসি-তামাসা তার পছন্দ ছিল না, ছোট বেলা থেকেই পিতার সাথে নামাযে যেতেন। অধিক আগ্রহ ছিল পড়া লেখার প্রতি।

জ্ঞানার্জনঃ

পল্লীর পরিবেশে অন্যান্য ছেলেদের সাথে আল্লামা বর্ণীর লেখাপড়ার সূচনা। পরবর্তীতে বাহাদুরপুর মাদ্রাসা থেকে ইবতেদায়ী সমাপ্ত করেন। ইবতেদায়ী সমাপনীর পর বিয়ানীবাজার সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে দাখিল উত্তীর্ন হন। ঐতিহ্যবাহী ঝিঙ্গাবাড়ি সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৯৫৩ সালে আলিম ও ১৯৫৫ সালে ফাযিল সফলতার সাথে পাশ করেন। হাদীস শাস্ত্রের বূৎপত্তি অর্জনের জন্য ১৯৫৫ সালে সিলেট আলিয়া মাদ্রসায় ভর্তি হয়ে ১৯৫৭ সালে বৃত্তিসহ অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে কামিল জামাত উত্তীর্ন হন। তৎকালীন উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খুল হাদীস আল্লামা হরমুজুল্লাহ সায়েদা (রহ.)ছিলেন তাঁর হাদীসের ওস্তাদ। আল্লামা বর্ণী রহঃ এর আমল আখলাকে মুগ্ধ হয়ে তিনি সব সময় তাঁকে কাছে রাখতেন এবং হাদীস শরীফ শিক্ষা দিতেন। ছাত্র জীবনে তাঁর আরেকটি বিষয় সবার নজর কাড়ে যে, লেখা পড়ার স্বার্থে প্রায়ই লোকালয় থেকে মসজিদে এতেকাফ করতেন।

তরীকতের ইজাযত লাভঃ

আল্লামা বর্ণী রহঃ এর জীবনে ছাত্র অবস্থায় আধ্যাত্বিক সাধনার প্রয়াস ঘটে। মাত্র ২১ বছর বয়সে স্বীয় মুর্শিদ আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর কাছ থেকে তরীকতের ইজাযত লাভ করে ইলমে তাসাউফের উচ্চ শিখরে আরোহন করেন। স্বীয় মুর্শিদের একান্ত সাহচর্জে তাঁর জীবনেব গতি পাল্টে যায়। তাঁর অন্তর ছিল ঈমানের নূরে নুরান্বিত। আখেরাত, মাগফেরাত, তাওবা ইত্যাদি বিষয় আসলে অবুঝ শিশুর মত কাদঁতেন।
আল্লামা ফুলতলী (রহ.) এর নির্দেশে তিনি বিভিন্ন পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে চিশতিয়া তরিকার চিল্লা ও হিজবুল বাহারের চিল্লা দেন। একবার ঘিলাছড়া(মুমিনছড়া) চা বাগানের পাহাড়ের গহীনে স্বীয় মুর্শিদের সাথে চিল্লায় মশগুল হোন। চিল্লার শেষ দিকে জনৈক খাদিম দেখলেন বর্নী ছাহেব তাঁর গর্তে বেহুশ হয়ে পড়ে আছেন। ফুলতলী ছাহেব রহঃ কে জানানো হলে তিনি বললেন, যিনি বেহুশ করেছেন তিনি হুশ করে দিবেন। এ চিল্লা সমাপ্ত হবার পর ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহঃ স্বীয় পাগড়ী মাথা থেকে খুলে শিষ্য বর্ণী ছাহেবকে পড়িয়ে দেন এবং তাঁর মকবুলিয়াতের জন্য দোয়া করেন।

কর্ম জীবনঃ
কর্ম জীবনের শুরুতেই শিক্ষকতার মহান পেশাকে গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে রাখালগঞ্জ দারুল কোরআন সিনিয়র মাদ্রসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁরঅক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজ হাতে মাদ্রাসার বিল্ডিং এর কাজ করেন এবং মক্তব থেকে আলিম স্তরে উন্নতি করেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে কুলাউড়া আলালপুর বদরপুরী (রহ.) এর ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে বর্ণী ছাহেবের আকর্ষণীয় বয়ান শুনে চান্দগ্রাম নিবাসী রইছুল হুফফাজ কুতুবুল আলম হাফিজ আব্দুল বারী ছাহেব বর্নীর ছাহেবকে একান্ত নিবেদন করে বললেন,আপনার মত একজন মিষ্টভাষী আলিমের প্রয়োজন চান্দগ্রাম মাদ্রাসায়। আল্লামা বর্ণী অপারগতা পেশ করলেন। কিন্তু আব্দুল বারী (বড় হাফিজ ছাহেব) নাছোড় বান্দার মত বর্নী ছাহেবকে ধরলেন এমনকি বললেন আমি আপনার জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দোয়া করব।
অবশেষে বড় হাফিজ ছাহেবের খাস দোয়া ও ফুলতলী ছাহেব কিবলার ইজাযতে ১৯৭২ সালে রাখালগঞ্জ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল পদ পরিত্যাগ করে চান্দগ্রামের ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে কোনরূপ অপমানবোধ করেননি। আল্লামা বর্ণী (রহ.) এর একনিষ্ট ত্যাগ ও খুলুসিয়াতের বদৌলতে পর্যায়ক্রমে ইবতেদায়ী থেকে ফাজিল পর্যন্ত উন্নীত হয়। চন্দগ্রাম আনওয়ারুর উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

পারিবারিক ঐতিহ্যঃ
পারিবারিক ঐতিহ্য আল্লামা বর্ণী (রহ.) কে সমৃদ্ধ করে তুলেছে, তাঁর একান্ত স্বপ্ন ছিল সন্তানদেরকে দিয়ে দ্বীনের খেদমত করানো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সকল ছেলেদেরকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করান। বর্তমানে সকল ছেলেই ইসলামের বিভিন্ন শাখায় খেদমতে নিয়োজিত আছেন। তাঁর মেয়েদেরকে বিবাহ দিয়েছন ইসলামী শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি প্রাপ্তদের সাথে। তাঁরা সবাই ইলমে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়াও তাঁর নাতিদের মধ্যে এ বাস্তবতা বিদ্যমান। তারা ইলমে দ্বীনের খেদমতের জন্য বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করছেন।

হজ্ব পালনঃ

রাসূল প্রেমিক এই মনীষী জীবনের প্রথম থেকেই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও রাসূল (স:) এর জিয়ারত দর্শনে মক্কা মদিনায় যাওয়ার জন্য পাগল পারা ছিলেন। অবশেষে তাঁর আকাঙ্খা পূর্ণ হয় ১৯৯০ সালে। মদিনা শরীফ যাওয়ার পর তিনি সর্বদা সেখানে পড়ে থাকতেন। তাঁর সফরসঙ্গী শাইখুল হাদীস আল্লামা সৎপুরী হুযুর, বর্ণী ছাহেবের মক্কা ও মদীনা শরীফ জিয়ারতের এশক ও মহব্বতের কথা প্রায়ই বর্ণনা করতেন।

নসিহতঃ

আল্লামা আব্দুর রহমান বর্নী স্বার্থক আলোচক ছিলেন। অধিকাংশ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তিনি ছিলেন মধ্যমনী। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানেও উপস্থিত হতেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে এমন আকর্ষনীয় বক্তব্য পেশ করতেন যাতে সব শ্রেণীর শ্রোতারা তাঁর বক্তব্য শুনার জন্য পাগল পারা হয়ে যেত। যেমনটি আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ তাঁর প্রথম ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে বলেছিলেন,
“বর্নীর ছাহেব ছিলেন আল্লাহর মকবুল বান্দা, অত্যান্ত সহজ সরল জীবন যাপন করে চলে গেছেন, কাউকে কোন দিন কষ্ট দেননি, আল্লাহর বান্দা কোন ওয়াজে উঠলে সুর দিয়ে ওয়াজ করতেন না কিন্তু মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাঁর আলোচনা শুনত এগুলো তাঁর মকবুলিয়তের পরিচয়”।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা আল্লামা বর্নী (রহ.) এর কথার মধ্যে এমন তাছির দিয়েছিলেন যে, তার ওয়াজ শুনা মাত্র যে কোন মাহফিল লোকে লোকারন্য হয়ে যেত।তাঁর ওফাতের পর পরই বিভন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদিতে তাকে সম্বোধন করা হয়েছে-পাওয়ার ফুল ভয়েস।

চারিত্রিক গুণাবলীঃ
আল্লামা বর্ণী (রহ.) ছিলেন পুত:পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। তিনি ছিলেন প্রিয় নবী (স:) এর আদর্শের তথা সুন্নতে নববীর মুজাচ্ছাম নমুনা। তাঁর ৭০টি বছর ছিল নানা গুণে গুণান্বিত।
এতবড় জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন নিরহংকার, সহজ-সরল, সাদামাটা জীবনের অধিকারী। সাধারান একজন মানুষের প্রতি তার ব্যবহার বা শ্রদ্ধা ছিল বিস্ময়কর, বিনম্রতা, উদারতা, সরলতা ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম ভুষণ। মুসাফিরের মত জীবন যাপন করতেন, নিজেকে মনে করতেন কবরের বাসিন্দা। যেমনটা বলেছিলেন তাঁর মুর্শিদ-
“ আল্লাহর বান্দা সহজ সরল জীবন যাপন করে গেছেন। কাউকে কোন রকম কষ্ট দেননি”
মুহুর্তের মধ্যে কাউকে আপন করা ছিল তাঁর স্বভাব। প্রতিটি মানুষ উপলদ্ধি করত তাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি ছিল সমান আন্তরিকতা। বিশেষ করে ছোটদের প্রতি,যা উপলদ্ধি করেছি দীর্ঘ দশ বছর।
মহান আল্লাহ তা’আলা বর্ণী (রহ.) কে সবর ও শোকরের এমন মহান নেয়ামত দান করেছিলেন যে, সুখে দুঃখে তাঁর জবান মহান আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকত। মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ তা’আলা নানাভাবে নবী রাসূল, আউলিয়াদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন। বর্নী (রহ.) অনেক বার পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং তা আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করেছিলেন। অসুস্থতার কারনে তাঁর নাকের একটি ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু দিন, তবুও তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেছিলেন “দয়াময়ের কত দয়া তিনি একটি ছিদ্র বন্ধ করলেও অন্যটি খুলে দিয়েছেন।

ইন্তেকালঃ
“জন্মিলেই মৃত্যু হয়” এ বাক্যটি আমির-ফকির, রাজা-বাদশা সবার ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য ঠিক তেমনিভাবে আল্লামা বর্ণী (রহ) এর বেলাও ব্যতিক্রম হয়নি। ইন্তেকালের পূর্বে প্রায় ১৫/২০ দিন অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসাধীন ছিলেন আয়েশা ক্লিনিকে। তাঁর অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আলেম-উলাামা, শিক্ষাবীদ, সমাজসেবক বক্ত বৃন্দরা প্রিয়জনকে এক নজর দেখার জন্য এসেছিলেন। এমনকি তাঁর মুর্শিদ আল্লামা ছাহেব কিবলাহ (রহ.) দেখতে এসেছিলেন। অবশেষে আল্লাহর মকবুল বান্দা ৯ই এপ্রিল ২০০২সালে রোজ মঙ্গলবার রাত দশ ঘটিকার সময় সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন মাওলার দরবারে।
আল্লামা বর্ণী রহঃ এর ওফাতের সংবাদ মুহুর্তের মধ্যে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ শুনার সাথে সাথে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে! সর্বস্থানে ছড়িয়ে পড়ে শোকের মাতম। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান মনীষীর জানাযার নামায তাঁর প্রতিষ্ঠিত “রহমানিয়া টুকা হাফিজিয়া মাদ্রাসা” মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। আল্লামা বর্ণী রহঃ এর কি সৌভাগ্য! উনার জানাযার নামাজের ইমামতি করেন তাঁরই আপন মুর্শিদ আল্লামা ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী রহঃ। জানাজা শেষে এই  ওলীকে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

লেখক:আল্লামা আব্দুর রহমান বর্ণী (রহ.)এর নাতী। 

সিলেট৭১নিউজ/তাহের-১০/০৪/২২





Calendar

November 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  



  1. © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2017 sylhet71news.com
Design BY Sylhet Hosting
sylhet71newsbd