সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: আহলান সাহলান মাহে রমজান। শুভেচ্ছা স্বাগত মাহে রমজান। বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে রোববার (০৩ এপ্রিল) থেকে পবিত্র রোজা শুরু হচ্ছে। সে হিসেবে শনিবার (০২ এপ্রিল)রাতেই তারাবিহর নামাজ পড়বেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
শনিবার (০২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে এ কথা জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। সভায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, আবহাওয়া অধিদফতর, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের আকাশে হিজরি ১৪৪৩ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
কোরআন নাজিলের মাস রমজান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
তাকওয়ার মাস রমজান। মহান আল্লাহর বাণী, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।’
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা পালন করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে রাত জেগে ইবাদত করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, হাদিস: ৩৭, ৩৬ ও ৩৪)।
প্রতীক্ষার প্রহর শেষে এল মাহে রমজান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১৭৭৮)।’
রমজানের প্রধান ইবাদত সিয়াম পালন করা। ‘সিয়াম’ হলো ‘সাওম’-এর বহুবচন, যার অর্থ বিরত থাকা। ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সাওমকে ‘রোজা’ বলা হয়। পরিভাষায় সাওম বা রোজা হলো, ‘ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের উদ্দেশ্যে পানাহার ও রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকা।’ আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা পানাহার কর ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা স্পষ্টভাবে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।
সাবালক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম সব নারী-পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা ফরজ ইবাদত। ঋতুমতী নারী, সন্তান প্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিরা এ রোজা পরবর্তীকালে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তিরা, যাঁদের পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা বিদ্যমান নেই, তাঁরা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন।
রোজাদারের জন্য রয়েছে জান্নাতে বিশেষ অভ্যর্থনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রায়্যান নামের একটি তোরণ আছে। এ তোরণ দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর এ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১৭৭৫)।’ রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের ফজিলত ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। একেকটি নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজ ইবাদতের সমান দান করা হয়।
রমজান মাসে ফরজ একটি—পূর্ণ মাস রোজা পালন করা। এ মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়াজিব দুটি—সদকাতুল ফিতর প্রদান ও ঈদের নামাজ আদায় করা। রমজানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুন্নাতগুলো হলো রমজানের চাঁদ দেখা; ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করা, সাহ্রি খাওয়া, তাহাজ্জত নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, কোরআন কারিম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং ইতিকাফ করা; রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয় শবে কদর সন্ধান করা, ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।
সিলেট৭১নিউজ /আইআর