সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: সিলেট জেলা বিএনপির বহু কাঙ্খিত দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সকাল সোয়া ১১টায় নগরের রেজিস্ট্রি মাঠে এই সম্মেলন শুরু হয়।
নানা নাটকীয়তা, সময় ও ভেন্যু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এই সম্মেলন নিয়ে তৈরি হয় ব্যাপক আগ্রহ। এছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থী হওয়া ও কেন্দ্রের চাপে প্রত্যাহারের কারণেও বিএনপির এই সম্মেলন আলোচনার জন্ম দেয়।
সকালে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা খফরুল ইসলাম আলগীর। আর সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গিরদার।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ, সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বগুড়া পৌরসভার মেয়র ও নির্বাহী সদস্য মো. রেজাউল করিম বাদশা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।
এর আগে গত ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এ সম্মেলন ও কাউন্সিল। তবে ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রের নির্দেশে এ দুটি আয়োজন স্থগিত করা হয়। কেন্দ্র থেকে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় আজ মঙ্গলবার ২৯ মার্চ। সম্মেলন ও কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে। তবে আজ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পার্শ্ববর্তী জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া ফুটবল দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। তাই কেন্দ্রের সম্মতিতে সম্মেলন ও কাউন্সিলের স্থান পরিবর্তন করেন রেজিস্ট্রি মাঠে নিয়ে আসা হয়।
সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিলে ৩ পদে লড়বেন ৯ জন। সভাপতি পদে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও আবুল কাহের চৌধুরী (শামীম), সাধারণ সম্পাদক পদে আ. ফ. ম কামাল, আলী আহমদ, অ্যাডভোকেট ইমরান আহমদ চৌধুরী ও মো. আব্দুল মান্নান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এম মুজিবুর রহমান মুজিব, লোকমান আহমদ ও মো. শামিম আহমদ।
এবারের কাউন্সিলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন। তবে কেন্দ্রের একরকম চাপে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার কাউন্সিলে ভোট দিবেন ১৮ শ ১৮ জন ভোটার। এর আগে ১৯৯৩ সালে একবার এভাবে ইউনিট কমিটিগুলোর সব নির্বাচিত নেতা জেলা কাউন্সিলে ভোট দিয়েছিলেন। আর দীর্ঘ ২৯ বছর এবার সেই নিয়মে হচ্ছে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্বাচন।
সম্মেলন ও কাউন্সিলকে সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ১৩ বিএনপি নেতা। তবে যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে ৩ পদে লড়াই করবেন ৯ জন।
বিএনপি সিলেট জেলা শাখার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল গাফফার বলেন, এবারে মোট ১৮ শ ১৮ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন। আজ দুপুর ১২ টা থেকে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য সময়। চলবে একটানা বিকাল পর্যন্ত। নির্বাচনে আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ সহযোগিতা করবেন। নির্বাচন পরিদর্শন করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের পছন্দের নেতার ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়েছেন সমাবেশস্থলের আশপাশে। রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে তোরণ।
অপরদিকে, জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল হয়। এতে কাউন্সিলরদের ভোটে আবুল কাহের চৌধুরী শামীম সভাপতি ও আলী আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালের ২ অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল। তিন মাসের এই কমিটি প্রায় আড়াই বছর পার করে দিয়েছে।
সিলেট৭১নিউজ /আইআর/সিটু