বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:: নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে সম্ভব সকল চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গতকাল ৩রা জানুয়ারী বিকেল ৫:৩০ ঘটিকার সময় বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এক বৃদ্ধা। চোখে মুখে উদ্বেগ উৎকন্ঠার ছাপ, কান্না কাতর করুণ চেহারা। দেখলেই চোখে ভাসে জীবন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক মানুষের ছবি। দুই সন্তান বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে পলাতক। একাদিক মামলায় বিভিন্ন সময় জেল খেটে জামিনে মুক্ত থাকা স্বামীকে কিছুদিন আগে কোন এক স্বজনের বাসা থেকে গ্রেফতার করে সাদা পোশাকের একদল পুলিশ। গ্রেফতারের পর থেকে নিজের স্বামীর আর কোন খোঁজ পাননি ভদ্রমহিলা। থানা পুলিশ আদালত কোথাও কোন হাদিস নেই একটি জলজ্যান্ত জীবিত মানুষের।
উপজেলার পালেরচক গ্রামের রুশনা বেগমের স্বামী আজমান আলীকে গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ এলাকার কোন এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করে সাদা পোষাকধারী পুলিশ পরিচয় দেওয়া কিছু সদস্য। গ্রেফতার করলেও আজমান আলীকে কোন আদালতে বা জেলে প্রেরণ করা হয়নি বলে রুশনা বেগমের অভিযোগ। সিলেট মৌলভীবাজার সহ আশপাশের প্রায় প্রত্যেক থানা, আদালত ও কারাগারে নিজের স্বামীর অবস্থান জানার চেষ্টা করেও কোন খোঁজ না পেয়ে অবশেষে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবে এসে নিজের স্বামীর সন্ধান পেতে সহযোগিতা চাচ্ছেন তিনি। রুশনা বেগমের কাঁন্নাজড়িত জিজ্ঞাসা , যে মিথ্যা মামলায় তার স্বামীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেই মিথ্যা মামলায় জামিন নিয়ে তার স্বামী বাহিরে ছিলেন। নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছিলেন তবু কেন তার স্বামীকে এভাবে গ্রেফতার করা হলো? গ্রেফতার যেহেতু করা হলোই বিচার হোক, আদালতে নেয়া হোক, জেলে প্রেরণ করা হোক, কিন্তু মানুষটি এখন কোথায় কি অবস্থায় আছে তাকে জানতে দেয়া হোক। রুশনা বেগম আরো বলেন, যে মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে তার ছেলেরা পলাতক রয়েছেন , যে মিথ্যা মামলায় তার স্বামীকে জামিনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করে গুম করে দেয়া হয়েছে সেই হত্যা মামলা ও অন্যান্য মিথ্যা মামলার সাথে তাদের পরিবারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তার স্বামীর সম্পত্তি ব্যবসা প্রতিষ্টান আত্মসাতের পরিকল্পনা থেকে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাদের পুরো পরিবারকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। ভয়ে কারো নাম উল্লেখ করতে না চাইলেও রুশনা বেগম বলেন সম্পত্তি দখলের পরিকল্পনা থেকেই তার স্বামীর ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দ্বারাই মিথ্যা মামলা অতঃপর গুমের মতো হৃদয়গ্রাহী গঠনার শিকার তার স্বামী। রুশনা বেগম জানান তার স্বামী উপজেলার রামপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন এবং তার দুই ছেলে আলী আহমদ এবং আলী হোসেনও বিএনপির অঙ্গ সংঘটন ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। উনার দাবী উনার স্বামী নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্টজন বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তার ছেলে যুবদল নেতা আলী হোসেন ইলিয়াস আলীর একান্ত লোক ছিলেন। এই কারনেই রামপাশা সহ উপজেলার আওয়ামীলীগ দলীয় নেতারা তাদের পরিবারকে ভিন্ন চোখে দেখতেন এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদেরকে সর্বশ্রান্ত করে দিয়েছেন।
রুশনা বেগমের সংবাদ সম্মেলনের ভিত্তিতে তার স্বামীর গুমের বিষয়ে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরদার ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আজমান আলী তিনটি মামলায় জামিনে আছেন এতটুকু জানি। জামিনে থাকা কোন আসামিকে নতুন কোন মামলা না হলে গ্রেফতার করার নিয়ম নেই। আজমান আলীকে আমরা গ্রেফতার করিনি। তার স্ত্রী এসেছিলেন, একটি মিসিং মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি আমরা। মামলা হলে আমরা উনার অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। আজমান আলীর ছেলেদের বিরুদ্ধে ও তো হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা আছে। আমরা আমাদের সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়েছি তার ছেলেরা হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে দেশের বাহিরে পালিয়ে গেছে। নিজের ছেলেদের অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে রায় আসতে পারে ভেবে আজমান আলীও হয়তো পলাতক হয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে কার বক্তব্য সঠিক, পুলিশ নাকি রুশনা বেগমের ? চোখের জলও কি মিথ্যা বলতে পারে? সকল অপরাধীই শাস্তির আওতায় আসা উচিৎ তবে বিচারবহির্ভূত গুম কাম্য নয়, যথাযথ আইনের ব্যবহারের মাধ্যমে শাস্তি হোক আজমান আলীও তার ছেলেদ্বয়, আলী হোসেন (৩০), মোহাম্মদ আলী আহমেদ(২২) যদি অপরাধী হয় , তবে সত্যিকার অর্থে পুলিশ গ্রেফতার করে থাকলে মানুষটিকে আলোয় নিয়ে আসা হোক। রুশনা বেগমের আকুল মিনতি তাকে জানতে দেয়া হোক তার স্বামী জীবিত আছেন নাকি প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মরে গেছেন।