সিলেট৭১ ডেস্ক:: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পারিবারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনার মধ্যে দেড় বছর আগে এই মরণব্যাধি সম্পর্কে জানতে পারলেও বিষয়টি পারিবারিকভাবেই গোপন রাখা হয়েছিল। বর্তমানে ভাইবোনদের চেষ্টায় চলছে মুহিতের চিকিৎসা। চিকিৎসকরা বলছেন, সাবেক এ অর্থমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তবে সাবেক তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও তার মানসিক অবস্থা বেশ শক্তিশালী।
শারীরিক অসুস্থতা ও দুর্বলতা সত্ত্বেও গত সোমবার জন্মভূমি সিলেট আসেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি বুধবার নিজ বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের কেক কাটেন। বক্তব্য রাখেন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে। ওই দিন সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তাকে গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা দেওয়া হয়। বিরল এই সম্মাননা পেয়ে অভিভূত হন মুহিত। সম্মাননা অনুষ্ঠানে স্মৃতিকাতর হয়ে তিনি অনেক আবেগঘন বক্তব্য রাখেন।
এদিকে, ক্যানসার তার পুরো লিভারে ছড়িয়ে পড়ায় মৃত্যুভয় তাকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। শুক্রবার তার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান ও দেশে লিভার ক্যানসারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব জানান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের লিভারের ক্যানসার বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রয়োজন রোগীর প্রবল ইচ্ছে। মুহিত সাহেব মানসিকভাবে বেশ শক্ত আছেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই পল্লী শিশু ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও ঢাকা ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এএসএ মুয়িয সুজন জানান, দেড় বছর আগে লিভার ক্যানসারের কথা জানতে পারেন তারা। ইচ্ছে ছিল লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করানোর। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।
গত বছর জুলাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেসময় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ঢাকার গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী।
ছোটভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন হাসপাতালে অগ্রজকে দেখে এসে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাবেক অর্থমন্ত্রীর একটি ছবি আপলোড করেন। সেখানে হাসপাতালের শয্যায় ক্ষীণকায় আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।
ওই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আবদুল মোমেন বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী খুব ভালো আছেন। তার মেজর কোনো অসুখ নেই। আগে যেসব অসুখগুলো ছিল সেগুলো কোনোটাই নেই। ডায়বেটিস, প্রেসার কিছুই নেই। তবে তিনি অত্যন্ত দুর্বল। কারণ অনেক দিন ধরে তিনি সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করেন না। ফলে তার ওজন খুবই কমে গেছে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেন। যার ১০টি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। তার ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে গত নির্বাচনে জয়ী হন ছোট ভাই ড. একে আবদুল মোমেন। এরপর একে আবদুল মোমেন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। অগ্রজ মুহিত যেভাবে অর্থমন্ত্রণালয় সামলে ছিলেন, একইভাবে অনুজ ড. মোমেন দক্ষতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে।
এবিএ/১৭ মার্চ