স্টাফ রিপোর্ট:: ব্রাহ্মমূহুর্ত থেকে শুরু হতো নাম কীর্তন। কীর্তনের কোল, করতালে জেগে উঠতেন ভক্তরা। শঙ্খ, কাঁসর ঘন্টা আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হতো গ্রামীণ জনপদ। ভক্তদের পদচারণায় ভোর থেকে সকাল অবদি মন্দির প্রাঙ্গণে বিরাজ করতো অন্যরকম সজীবতা। দুপুরে হতো মহাপ্রসাদ বিতরণ। সন্ধায় আবারও যথারীতি নামকীর্তন। আশপাশের মানুষ ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে পূণ্যার্থীদের আগমণ ঘটতো মন্দিরে। এখন আর সেই অবস্থা নেই। তালা লাগানো থাকে মন্দিরের প্রধান ফটক। ভক্তদের ভিড় নেই মন্দিরে। এমনকি বাহির থেকে যে কেউ মন্দির পরিদর্শনে গেলে ফিরতে হবে শুন্য মুখে। ভক্ত শূন্য এই মন্দিরের নাম শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘ (সিটিএস) মন্দির।
মন্দিরটির অবস্থান মৌলভীবাজার জেলাধীন কুলাউড়ার পুষাইনগরে। শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘ (সিটিএস) মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল ভক্তিপ্রপন্ন যতি গোস্বামী মহারাজ-যিনি গুরু মহারাজ নামে নিজ শিষ্যদের কাছে পূজিত। সম্প্রতি তিনি মন্দির নির্মাণের কাজে ভারত যাওয়ার পর পরই শুরু হয় ঘৃণ্য চক্রান্ত। এই চক্র মন্দিরের যাবতীয় অর্থ আত্মসাতে মরিয়া হয়ে উঠে। এই চক্রান্তে পা রাখেন গুরু মহারাজের শিষ্য (গুরু মহারাজের অবর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্দিরের বর্তমান কর্মাধ্যক্ষ) দামোদর মহারাজ।
স্থানীয় ভক্তবৃন্দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালে মন্দিরটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন শ্রীল ভক্তিপ্রপন্ন যতি গোস্বামী মহারাজ। এরপর থেকে শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘ নাম দিয়ে তিনি বাংলাদেশে প্রথম এর যাত্রা শুরু করেন। কুলাউড়া থেকে শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘের যাত্রা শুরু হলেও এক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ধর্মীয় প্রচারকার্যে বিভিন্ন স্থানে শ্রীমৎ ভাগবদ পাঠ এবং কীর্তনাদী প্রচারের মাধ্যমে সর্বত্রই পূজিত হতেন গুরু মহারাজ ভক্তিপ্রপন্ন যতি গোস্বামী। ইতোমধ্যে সর্বত্র উনার ভক্ত ছড়িয়ে পড়লে কুলাউড়ার মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু করার তাগিদ বোধ করেন তিনি। এর আগে এই মন্দিরটি গৌরাঙ্গ মহাপ্রভূর মন্দির বলে পরিচিত ছিল।
২০১৩ সালে গুরু মহারাজের আহবানে মন্দির নির্মাণের উদ্যোগে সাড়া দেন স্থানীয় ৭ গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ। তাদের সহযোগীতায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা কালেকশন করা হলেও মন্দিরের ব্যয় নির্ধারণ প্রায় কোটি টাকা। নিরাশ হলেও দমে থাকেননি গুরু মহারাজ। অগত্যা তিনি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সকল ভক্ত সজ্জনদের দ্বারস্থ হন। অবশেষে গুরু মহারাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় শ্রী চৈতন্য অপ্রাকৃত সংঘ বা সিটিএস মন্দির। এর একটি লিয়াঁজো অফিস রয়েছে ঢাকার তাঁতীবাজারে।
এদিকে ভক্তিপ্রপন্ন যতি গোস্বামীর হাত ধরে শিষ্যত্ব লাভ করেন মন্দিরের বর্তমান কর্মাধ্যক্ষ দামোদর মহারাজ। পূর্বে যার নাম ছিল শুভেন্দু শিকদার তপু। গুরু মহারাজের শিষ্যত্ব লাভের আগে তিনি আরও দুইজনের কাছ থেকে দীক্ষা লাভ করেন। তৃতীয়বারের মতো গুরু হিসেবে ভক্তিপ্রপন্ন যতি গোস্বামীর শিষ্যত্ব লাভ করেন তিনি। একজন ভালো ভাগবদ পাঠক হিসেবেও তিনি সর্বত্র সমাদৃত।
গেল ১১ মার্চ কুলাউড়ার সিটিএস মন্দির পরিদর্শন করে এই মন্দির নিয়ে একটি সিন্ডকেটের অনিয়মের নানা তথ্য উঠে আসলো। একই সাথে মন্দিরের প্রতিষ্ঠিত গুরুমহারাজের আসনকে অবমাননা, একটি গোপন কমিটির মাধ্যমে দামোদর মহারাজের আধিপত্য বিস্তার, নারীর সাথে রোমান্টিক আলাপচারিতা, ভারতীয় এমএলএম কোম্পানী ফরএভারের সাথে কানেকশন এবং নিজ জন্মস্থান নিয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য খুঁজে পাওয়া গেল। সিলেটের জনপ্রিয় নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর এনওয়াই মন্দিরের অগনিত ভক্তবৃন্দের ও পুরনো অবস্থায় মন্দিরের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই ধারাবাহিক সেই কাহিনীগুলো প্রচার করবে। একইসাথে দূরাচারী এবং আর্থিকভাবে মোহাবিষ্ট কদর্য মুখগুলোর মুখোশ উন্মোচন করবে। এরই অংশ হিসেবে আজ ১৫ মার্চ প্রথম পর্ব প্রকাশ হলো।
দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ হবে ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার।
এবিএ/১৬ মার্চ