জৈন্তাপুর প্রতিনিধি;: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডালিম আহমদ (২৪) -ফজর আলী একসময় ছিলেন তাঁরা দুজনে ভালো বন্ধু। এর মধ্যে তাঁর একটি অবৈধ সম্পর্কের কথা জেনে যান ডালিম। আর এটাকে পুঁজি করে বারবার ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এই পীড়ন থেকে বাঁচতে ডালিমকে খুন করেন ফজর। ডালিম আহমদ (২৪) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ফজর আলী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিকালে তিনি এসব কথা বলেছেন।
সিলেট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোমবার (১৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ফজর। আদালত সূত্রে জানা গেছে, একটি অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে ব্ল্যাকমেল করে বারবার ফজরের কাছে টাকা দাবি করতেন ডালিম। টাকা না দিলে বিষয়টি মানুষকে জানিয়ে দেওয়াসহ বাবুর্চির কাজ করা ফজরকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন। এভাবে প্রায় দুই লাখ টাকা ডালিমকে দিয়েছেন বলে দাবি করেন ফজর।
ফজরের জবানবন্দির বরাতে আদালত সূত্র জানায়, ৫ মার্চ ১৬ হাজার টাকা চেয়েছিলেন ডালিম। কিন্তু ফজরের কাছে এত টাকা ছিল না। তিনি ডালিমকে ৫ হাজার টাকা দিলেও তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে চাহিদামতো টাকা না দেওয়ায় ফজরকে ঘুষি আর সঙ্গে থাকা চাকু দিয়ে আঘাত করতে যান ডালিম। এ সময় বাঁ হাতে চাকু ধরে ফেলেন ফজর। তিনিও সঙ্গে থাকা চাকু দিয়ে ডালিমের বুকে ও গলায় আঘাত করেন। এতে আহত হন ডালিম; একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে যান। আবার উঠে দৌড়াতে থাকলে ফজর পুনরায় দৌড়ে ধরে গলায় আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন। পরে জৈন্তাপুরের ঘাটেরচটি এলাকায় মসজিদের পাশে মাঠে মাটি চাপা দিয়ে কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে চিকিৎসা নেন ফজর।
এর আগে ৮ মার্চ গভীর রাতে মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় ডালিমের লাশ উত্তোলন করে পুলিশ। পরের দিন ডালিমের বাবা বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে ফজরকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত শুক্রবার তাঁকে আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে বাহিনীটি। বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ফজর আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাঁকে আজ আদালতে তোলা হয়।
৫ মার্চ ডালিম নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন জৈন্তাপুরেই নিখোঁজ হন শম্ভু দেবনাথ নামে আরেক যুবক। এ ঘটনার পর ৭ মার্চ ঘাটেরচটি এলাকার একটি পুকুর থেকে মুখমণ্ডল বিকৃত একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি ডালিম আহমদের ভেবে ৮ মার্চ দাফন করা হয়েছিল। ওই দিন রাতেই একই এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় আরও একটি লাশ উদ্ধার হলে প্রথম লাশের পরিচয় নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে দুই লাশের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে দেখা যায়, ডালিম আহমদ ভেবে মূলত শম্ভু দেবনাথের লাশ দাফন করা হয়েছিল।
এই যুবকের খুনের ঘটনায় সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমানের তত্ত্বাবধানে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সহকারী পুলিশ সুপারের (কানাইঘাট সার্কেল) নেতৃত্বে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান বলেন, ডালিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা হয়। শম্ভু দেবনাথ নামের আরেক খুনের ঘটনায় তদন্তকাজ চলমান। আশা করা যায়, ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্যও দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
আইআর/১৫ র্মাচ