সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার পাওয়া গেছে ১৫ বস্তা টাকা। ৪ মাস ৬ দিনে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়ল সেখানে।
দিনভর গুনে পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া জমা পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। সর্বশেষ গত বছরের ৬ নভেম্বর দানবাক্সে জমা পড়েছিল ৩ কোটি ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। তখন দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল ৪ মাস ২৬ দিন পর।
কিন্তু এবার চার মাস যেতে না যেতেই এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা জমা পড়ল দানবাক্সগুলোয়। টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ নানা ধরনের জিনিস দান করেন বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষ।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল ৮টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। বাক্সগুলো থেকে টাকাগুলো প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। তারপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বস্তা থেকে টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। এতে অংশ নেন মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ ও মসজিদ কমিটির ৩৪ জন।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূইয়া জানান, মসজিদে দানবাক্স রয়েছে আটটি। সেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ সহায়তা দিয়ে থাকেন। করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।
পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের হাফিজিয়া মাদ্রাসার খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে।
দানবাক্স খোলার পর থেকেই গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। গণনা দেখতে এসেছেন মশিউর রহমান নাদিম। তিনি ইটনা উপজেলার বাসিন্দা।
নাদিম বলেন, ‘মানুষের মুখে আর বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়া টাকার কথা শুনি। এবার নিজ চোখে দেখতে এসেছি। সত্যিই এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখিনি। তা ছাড়া আমার জানামতে, কোনো মসজিদের দানবাক্সে এত পরিমাণ টাকা জমা পড়ে এমন খবরও শুনিনি।’
গণনায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম জানায়, দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থীরা সেখানে থাকে। মো. সাইফুল নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী মসজিদের দানবাক্স কখন খোলা হবে অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই অপেক্ষায় থাকে। একসঙ্গে এত টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালংকার দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগে। সবচেয়ে আনন্দ লাগে সবাই মিলে একসঙ্গে টাকা গুনতে।
পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন। তিনি এই মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ ২৭ বছর। তিনি বলেন, ‘শুধু মুসলিম না, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’
দানবাক্স কমিটির আহ্বায়ক ও কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানমের তত্ত্বাবধানে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
অতিরক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল ইসলাম সরকার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে এলাহী, ইকবাল হোসেন, মহিবুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, উবাইদুর রহমান সাহেল, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে অবস্থিত পাগলা মসজিদ।
আইআর/১৩ র্মাচ