অজয় বৈদ্য অন্তর:: এবারের বইমেলায় বের হয়েছে বিশিষ্ট কবি সুশান্ত হালদারের ষোড়শ কাব্যগ্রন্থ ‘একটি যুদ্ধ ও প্রেম । বইটি প্রকাশ করেছে ‘ভিন্নচোখ’ প্রকাশনী। ৬৪ পৃষ্ঠার বইটিতে কবিতার সংখ্যা- ৫৮। বাংলা একাডেমি চত্বরে ৫৩৩ নম্বর স্টলে এ বইটি পাওয়া যাবে। মেলা উপলক্ষে ২৫% ছাড়ে মাত্র ১৫০/- টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বইটিতে কবি তাঁর কাব্য-ভূমিকার মাধ্যমে কবিতার এক নতুন ভূমি তৈরি করেছেন, সেই ভূমির ঔজ্জ্বল্যে কবিতা পেয়েছে–ভিন্নমাত্রা।আর সেই ভিন্নমাত্রার স্বাদ নিতে পাঠক হয়ে যার কবিতা গ্রহণ করি, যার কবিতার কাছে যাই। তিনি হলেন কবি সুশান্ত হালদার। সাবলীল ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সাধারণ মানুষের কথা, মানুষের গোড়ামী দূরামী, চিন্তা চেতনাবোধ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এ বইয়ে।
এ ব্যাপারে কবি সুশান্ত হালদার বলেন, ‘যত দিন গিয়েছে ততই আমার মনে হয়েছে, শুধু কবিতা নয় যেকোনো শিল্প বা সাহিত্য বা ছবি আসলে আমরা যে সাধারণ দুনিয়াদারির ধারণার ভেতর বসবাস করি, মুহূর্তেই তার পরিবর্তন ঘটায়। এবং এর থেকেও বড় ব্যাপার হলো একটা মানুষের কবিতা বা শিল্প বা সাহিত্য বা ছবির ভেতর দিয়ে যে পরিবর্তিত অবস্থায় পৌঁছায় তার থেকে পূর্বে আর ফেরত যেতে পারে না। এখন এই পরিবর্তন নেতি বা ইতিবাচক দুই হতে পারে। সমগ্র দুনিয়া দিকে তাকালে দেখবেন, সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর সৈনিকদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র যে ক্ষমতা ও ধ্বংস করার ক্ষমতা দেয় তার থেকে বেশি প্রাণ শক্তি জনগণের ভেতর সঞ্চালন করতে মাত্র মাত্র কটি শব্দ, কটি বাক্য বা একটি কবিতা। ফলে, ক্ষেত্র বিশেষে একটি সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর অন্ত্র থেকে কবিতা বিধ্বংসী। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কবিতাই প্রথম কথা বলে। দুঃশাসনে ভেতর থাকতে থাকতে যখন মানুষ স্বাধীনতা ও অধিকার ভুলে যায় তখন জনপদের এক কোন থেকে উস্কশুষ্ক চুলে প্রায়ান্ধ একজন লোক বলে ওঠে কবিতায় এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। আবার বসন্ত এলে ফুল যতই ফুটুক কবিকে কবিতায় বলে না দিলে বসন্ত মানুষের মনে জাগে না।
কবি আরো বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের নিজের মতো একটা ভাবনা থাকে। প্রতিটা মানুষের উপলব্ধি আলাদা। তাদের অভিজ্ঞতা ও গল্পগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের দুনিয়া দেখা ও উপলব্ধি করার প্রক্রিয়ার সাথে আরো কিছু সংযুক্ত করতে চেয়েছি ‘ মানুষ একাকী এক মিথ’ দিয়ে। আমাদের বহু চিন্তাকে উল্টে দেখার বাকি আছে। দুনিয়ায় অনেক প্রেমের অনুভূতি বা পদ্ধতি আছে যা এখনো অনাবিষ্কৃত, অব্যবহৃত। যেগুলোকে কবিতায় বলে দিতে হয়। অনেক দ্রোহ বাকি আছে কবিতায় লেখার। চলিত নৈতিকতার যে ধারাপাত তাকে অপ্রয়োজনীয় বস্তুর মতো দেহের ঘর থেকে বিদায় করে দেওয়া দরকার যেনে নতুন নতুন নৈতিকতার বৈধতা তৈরি হয়।
কবি তাঁর বোধের ভিত্তি ও দর্শন আমূলে বদলে ফেলেননি, ধারাবাহিকতার সামঞ্জস্যে নিজের প্রতিকৃতি ও কবিতার প্রকৃতি গড়ে তুলেছেন। তাই তিনি দৃঢ়ভাবে বলতে পারেন…
কে আছো ভাই;যাবে কি সবাই?
রুদ্র রবি জ্বলে ওঠার আগেই
শ্লোগানে শ্লোগানে সামিল হবো সবাই,
চেয়ে দেখো তাক করা নিশানায় আমরা আজও
নিষ্ঠুর পৃথিবীর পরিযায়ী পাখি সবাই!
কবিতার পংক্তিতে সুশান্ত হালদারের নিজস্ব কবিতা-ভঙ্গিরই রূপ আমরা খুঁজে পাই। কবি সুশান্ত হালদারের কবিতা বাংলার কবিতার ঐশ্বর্যে বিকাশে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।
লেখকের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ-
এ পর্যন্ত মোট ১৬ টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তির গান, অনির্বাণ,নক্ষত্রের পতন,লালটিপ,লাশকাটা ঘর, নীলা, অবন্তীকার কাছে খোলা চিঠি,পুষ্পের আহাজারি উল্লেখযোগ্য।
এবিএ/ ০৪ মার্চ