স্টাফ রিপোর্ট:: সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সীমা বেগম পপিকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার (২ মার্চ) রিমান্ডের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। কাল (বৃহস্পতিবার) তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলী মাহমুদ।
তিনি জানান, পপির কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে।
সীমা বেগম পপি। বয়স ৩৫। হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বাড়ি। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরে। লোকজনের পকেট ও ভ্যানিটি ব্যাগ কাটা তার মূল পেশা।
পুলিশ বলছে- মানুষের পকেট কাটার পাশাপাশি পপি জড়িয়ে আছেন মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কর্যকলাপ, মারধর ও ছিনতাইসহ নানা অনৈতিক কাজে। বার বার ধরা খান পুলিশ ও জনতার হাতে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দ্রুত বেরিয়ে আসেন জেল-হাজত থেকে। নবউদ্যমে ফেরেন পুরনো অন্ধকার জগতে।
পপি সর্বশেষ ধরা খান গত রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন দিতে আসা লোকজনের ভিড়ে এক নারীর স্বর্ণের হার ও দুল চুরি করেন। আরেকজনের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা নিতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা খান তিনি। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন জনতা। এ ঘটনায় ওই দিনই তার বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালি থানায় ফাহমিদা নামের এক নারী মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা দায়েরের পরদিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) পপিকে আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। এসময় দুই দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশন দেন আদালত।
পুলিশ ও ভিকটিম সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুপুর দেড়টার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে আসেন এক বৃদ্ধ মহিলা। লিফটে করে ৫তলায় ওঠার সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন পপি। এ সময় বৃদ্ধাকে ধরে রাখার ভান করে মুহুর্তে কৌশলে তার দুই ভরি ওজনের গলার হার ও কানের স্বর্ণের দোল চুরি করে নিয়ে নেন পপি। লিফট থেকে বেরিয়েই ফাহমিদা নামের আরেক মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়েন তিনি। এসময় পপি হাত থেকে টাকা নিচে ফেলে দিয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণ করতে গেলেও জনতা তাকে আটক করে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের হাতে তুলে দেন। খবর পেয়ে ওসমানী হাসপাতালের ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে।
তবে বৃদ্ধার চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার পপির কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে- পপি জিনিসপত্র চুরি করে দ্রুত তার চক্রের সদস্যদের হাতে পাচার করে দেয়। যার করণে পরবর্তীতে তল্লাশি চালালেও তার কাছ থেকে কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সীমা বেগম পপির বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামুরা গ্রামে। তিনি বিবাহিত। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নগরীর শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ৪ নং রোডের বিলের পার এলাকায় গড়ে তুলেছেন ৪ তলা বাসা। সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন পপি। সেখানে রাত-দিন রয়েছে পরিচিত-অপরিচিত মানুষের আনাগুনা।
বাসার পাশেই পপি একটি মোদি দোকান ও খামার রয়েছে। তার স্বামী সেই দোকান ও খামার দেখাশুনা করেন। আর ওসমানী হাসপাতাল এবং নগরীর জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজারে পকেটমার হিসেবে পপির পরিচিতি। বিশেষ করে ওসমানী হাসপাতালে তার দৌরাত্ম্য বেশি। সকাল হলেই বোরকা পরে নগরীর অলিগলি ও পথের পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কেটে ঢুঁ মারেন তিনি। ঘুরে বেড়ান ওসমানীসহ সরকারি-বেসরকাীর বিভিন্ন হাসপাতালে। সুযোগ বুঝে কৌশলে ছিনিয়ে নেন স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও টাকা-পায়সা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পপি। কিন্তু প্রত্যেকবারই জেল থেকে বেরিয়েই পুরোনো পেশায় যুক্ত হয়।
পুলিশ জানায়, পপির বিরুদ্ধে সিলেটের শাহপরাণসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় অর্ধশত মামলা রয়েছে। তার মূল পেশা চুরি। কিন্তু পাশাপাশি ছিনতাই, অসামাজিক কাজ, মাদক কেনাচেনাহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তিনি। ২০১৯ সালের ৩০ মে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে পপি ও তার সহযোগী স্বপ্নাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন পুলিশ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করে। ওইদিনই তারা বেরিয়ে আসেন জামিনে। একই বছর ৩০ জুন নগরীর জিন্দাবাজার সিটি সেন্টারের সামনে থেকে স্বপ্না ও পপিকে আটক করে পুলিশ। থানাহাজতে তাদেরকে এক রাত আটকেও রাখা হয়। পরে রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। প্রসিকিউশনের মাধ্যমে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে সেখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসেন পপি ও স্বপ্না। বিভিন্ন সময় আরও অন্ততঃ ৫ বার পুলিশ এবং জনতার হাতে ধরা খয়েছেন পপি। কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তার অপকর্ম।
এছাড়াও একটি মারামারির ঘটনায় সিলেটের শাহপরাণ থানায় পপির বিরুদ্ধে মামলা। থানাসূত্রে জানা গেছে, ওই মামলায় চার্জশিটও হয়েছে। পপি একটি কিশোর গ্যাং পোষেন বলেও জানা গেছে। সেই গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে অন্তর।
সূত্রমতে, পপি ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা পুলিশের হাতে আটকের পর তাদের শেল্টারদাতাদের খবর দেয়া হয়। তখন তারা থানাপুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে অনেক সময় থানা থেকেই ছাড়িয়ে নেন। আবার কখনও প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয় এবং পরবর্তীতে সহজেই তারা বেরিয়ে আসেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জয়নাল আবেদীন রবিবার বলেন, আমার দায়িত্বকালীন সময়ে চুরি ও ছিনতাইয়ের দায়ে ওসমানী হাসপাতাল এলাকায় মোট ৪ বার ওই নারীকে ধরা হয়েছে। কিন্তু জেল থেকে জামিনে বের হয়েই সে আবার চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে যায়।
পপির বিষয়ে সিলেট শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, পপির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সে অনেক কৌশলী। যার কারণে তাকে আমরা ধরতে পারছি না।
তিনি বলেন, তার মূল পেশ পকেট ও ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা, মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি। তবে পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধ করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আমরা তাকে ধরার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক সময় তাকে চুরির অভিযোগ ধরলেও উপযুক্ত সাক্ষী ও তথ্য-প্রমাণের অভাবে দ্রুতই সে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়।
তবে এই প্রথম তাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেওয়া হলো।
এবিএ/ ২ মার্চ