দিরাই প্রতিনিধি:: দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবায় দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলা ও পাশ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার ৫ লাখেরও বেশি মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এ সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হচ্ছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিষয়টির সুরাহা মিলছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে বিগত ছয় বছর আগে। কিন্তু জনবল বাড়েনি। উপরন্তু ৩০ শয্যার জনবলই সেখানে নেই। ৩০ শয্যার জন্য মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসক রয়েছেন ৪ জন। সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৪টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৪ জন। বাকি ১১ টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ২ জন।
কর্মরত ৪ জন ডাক্তারের মধ্যে রুটিন অনুযায়ী একজন করে ডিউটি করেন জরুরী বিভাগে তবে তারা কেউ জরুরী বিভাগে অবস্থান করেন না। রোগীদের চিকিৎসা দেন কমিউনিটি উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও ডিপ্লোমা ইন্টার্নি চিকিৎসকরা, তবে স্থানীয় সচেতন রোগীরা আসলে ডাক্তার কে ফোন করে ডেকে আনা হয়, হাসপাতাল কোয়ার্টারে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন মেডিকেল অফিসাররা। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অসচ্ছল ও দরিদ্র রোগীদের। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমনিতেই সমস্যার কোন শেষ নেই। তার উপর করোনার প্রভাব। জনবল সংকটের কারণেই ওয়ার্ডবয়, সুইপার ও ক্লিনারদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালানো হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রতিদিন বহির্বিভাগে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভর্তি রোগী ছাড়াও বহির্বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক রোগী কমপ্লেক্সেটিতে ভর্তি হলেও চিকিৎসক সংকটে মানসম্মত চিকিৎসা তারা পাচ্ছেন না। এছাড়াও নিন্মমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। জরুরী বিভাগে বেশির ভাগ সময় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ও পরিচ্ছন্ন কর্মী দিয়ে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয়। ফলে চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও রোগীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এদিকে, প্রায় ৮ বছর আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন স্থাপন করা হলেও রেডিওগ্রাফারের অভাবে এটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকটও রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে। ফলে দাফতরিক কাজসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মনি রানী তালুকদার চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, অধিকাংশ পদই শূন্য রয়েছে। লোকবল না থাকায় নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ স্বাধীন কুমার দাস বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বাববার বলা হলেও কোনও সমাধান হচ্ছে না। এতো স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতালে মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। জানা যায়, হাওর বাসীর উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দিরাই বাসীর একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি ৩০ শয্যা থেকে ২০১৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রয়োজনীয় জনবল সংকট ও সরঞ্জামের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা চরম ব্যাহত হচ্ছে।
এবিএ/২৪ ফেব্রুয়ারী