কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি:: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯৬ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে যেতে হয় অন্য প্রতিষ্ঠান কিংবা অস্থায়ী শহিদ মিনারে। উপজেলার তেমনি একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢালারপাড় উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের ৩২ বছর পার হলেও সেখানে নেই কোনো শহিদ মিনার। শিক্ষার্থীরা কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করে তাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে দেখা যায়।
এইরকম অসংখ্য বিদ্যালয় রয়েছে যাদের নিজস্ব শহিদ মিনার নেই। দীর্ঘদিন শহিদ মিনারশুন্য প্রতিষ্ঠানে মিনার নির্মাণে নেই কোনো উদ্যোগ কিংবা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক পর্যায়েও পাচ্ছেনা শহিদ মিনার। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে শহিদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের মত গুরোত্বপুর্ণ দিনেও পুস্পার্পণের কোনো সুযোগ পাচ্ছেনা শিক্ষার্থীরা। বাস্তবিকে শহিদ দিবস ও মাতৃভাষা দিবসের বিশেষত্ব জানতে পারছেনা তারা। এভাবে চলতে থাকলে বাঙ্গালীর গৌরব ইতিহাসশুন্য জাতিতে পরিনত হবে কোম্পানীগঞ্জের শিক্ষার্থীরা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল হক বলেন, উপজেলায় ৭৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৭টি প্রি-ক্যাডেট এবং ১টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সর্বমোট ৯৬ টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার রয়েছে। অন্য ৮০ টি বিদ্যালয়ে নেই কোনো শহীদ মিনার। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা রয়েছে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যেন প্রতি বছর ২টি শহিদ মিনার নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এভাবে প্রতি বছর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ২টি করে মোট ১২টি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিদ্যালয়েই শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদিউজ্জামান বলেন, উপজেলায় ২১ টি মাধ্যমিক ও ৫টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ২টি কলেজ রয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অধিনে সর্বমোট ৩৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার আছে।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সর্বমোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ শত ৩০ টি। এর মধ্যে ১ শত ০৪ টি বিদ্যালয়ের শহিদ মিনার নেই এবং ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনার রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বদিউজ্জামান প্রতিবেদককে বলেন, সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বলে দিয়েছি শহিদ মিনার নির্মাণ করতে। টাকার যোগান কিভাবে হবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, টাকার যোগান প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডি ব্যবস্থা করবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, যে সব প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনার স্থাপনের আর্ধিক সামর্থ নেই তাদেরকে এলজিএসপি ও এডিবি খাত থেকে বরাদ্দ দেই। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়েই শহিদ মিনার নির্মাণ করা হবে। খুব শিগ্রই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনা করে শহিদ মিনার বিহীন বিদ্যালয়ের তালিকা করা হবে এবং শহিদ মিনার নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সত্যজিত রায় দাশ বলেন, শহিদ মিনার নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগটি মুলত বিদ্যালয় কতৃপক্ষ থেকেই শুরু করে। আর অর্থের বরাদ্দটা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের পরিষদ থেকেই ব্যাবস্থা করে দেন। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলবো তারা যেন এই বিষয়টা নিয়ে কতৃপক্ষের সাথে দ্রুতই বসে।
এবিএ/২৩ ফেব্রুয়ারী