সিলেট৭১নিউজ ডেস্কঃঃ বরিশালের গৌরনদীতে তিন মাসের সন্তানকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যার ঘটনার রেশ কাটকে না কাটতেই পার্শ্ববর্তী বাদুরতলা গ্রামে ৪৩ দিন বয়সী কন্যা সন্তানকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মায়ের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মা হিমা আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করে হিমা আক্তার জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কান্না করায় অতিষ্ঠ হয়ে শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা করেছেন। শেষে আত্মরক্ষার্থে মরদেহ পুকুরে ফেলে দিয়ে সবাইকে জানান তার মেয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে।গৌরনদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, আটক হিমা আক্তার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জানা গেছে, উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মোক্তার মেলকারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন ২০১৬ সালে একই উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের মৃত হালিম আকনের মেয়ে হিমা আক্তারকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় বার হিমা আক্তার অন্তঃসত্ত্বা হলে মায়ের কাছে বাদুরতলা গ্রামে আসেন। সেখানে ৪৩ দিন আগে কন্যা সন্তান প্রসব করেন।
গৌরনদী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ জানান, সিজারের মাধ্যমে হিমা আক্তারের কন্যা শিশু জন্ম নেওয়ার পর নাম রাখা হয় খাদিজা ইসলাম রুকাইয়া। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হিমা আক্তার তার কন্যা শিশুকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেন। দুপুর ১২টার দিকে হিমা আক্তার মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কান্নাকাটি শুরু করলে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পরদিন রাতে শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এসআই হারুন অর রশিদ জানান, ঘর থেকে ৪৩ দিনের শিশু হামাগুড়ি দিয়ে পুকুরের পানিতে পড়তে পারে না। শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা নিয়ে তদন্ত শুরু করলে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। সোমবার রাতে শিশুটির মা হিমা আক্তারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
গৌরনদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন বলেন, শিশুটি জন্মের পর থেকেই অতিরিক্ত কান্না করতো। এতে মা হিমা আক্তার বিরক্ত হয়ে মেয়েটিকে ওই দিন গলা টিপে হত্যা করে। পরে নিজেকে রক্ষায় মেয়ের মরদেহ পুকরের পানিতে ফেলে দেন। দুই ঘণ্টা পর নিজেই কান্না শুরু করেন সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেন। শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, হিমা আক্তার মানসিক ভারসাম্যহীন নয়, সে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ। কিন্তু কেন সে তার নিজের মেয়েকে হত্যা করল, সেটা বুঝতে পারছি না। এর আগে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর গৌরনদী উপজেলার বরদুলালী গ্রামে মা ছালেহা বেগম (৩৪) নিজের সাড়ে তিন মাসের ছেলে জুবায়ের তালুকদারকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় মা ছালেহাকে পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে তিনি সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করেন। ছালেহা বেগম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
বিএ/২৩ ফেব্রুয়ারি