সিলেট৭১নিউজ ডেস্কঃঃ রংপুরের পর সিলেটকে একসময় বলা হতো জাতীয় পার্টির দ্বিতীয় ঘাঁটি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও সিলেটকে তার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে পরিচয় দিতেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনপ্রাপ্তির দিক থেকেও দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির থেকেও এগিয়ে থাকতো দলটি। কিন্তু নেতৃত্বের দুর্বলতা, নেতাদের দলছুট নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে জাতীয় পার্টির আগের সেই অবস্থান এখন আর নেই। সিলেটে এখন নেতারা ব্যস্ত নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে আর পদ বাগিয়ে নেয়ার রাজনীতিতে। সংগঠনের দিকে নজর নেই কারো।
গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সকল উপজেলায় একটি করে ইউনিয়নেও দলীয় প্রার্থী দিতে পারেনি সংগঠনটি। অনেক নেতা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এমন অভিযোগও ওঠেছে দলের ভেতরে।দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সম্মেলনস্থলে সেলিম উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা করেন। পরে আবুল কাশেম মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রিয় জাতীয় পার্টি। দুই বছরের মাথায় ২০১৫ সালে এই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয় নতুন আহ্বায়ক কমিটি। আহ্বায়ক কমিটি ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় কেটেছে ৭ বছর। এই ৭ বছরে ৩টি প্রস্তুতি কমিটি হলেও সম্মেলনের দেখা পাননি দলের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ কুনু মিয়াকে আহব্বায়ক ও ওসমান আলীকে সদস্যসচিব করে কমিটি দিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিন মাসের কমিটি একবছর পার করলেও সম্ভব হয়নি সম্মেলন আয়োজনের।এদিকে, শুরুতে কুনু ও ওসমানের সমন্বয়ে দলীয় কার্যক্রমে কিছুটা ইতিবাচক হাওয়া বইলেও গেল ইউপি নির্বাচন থেকে জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন নিয়েও দ্বন্দ্বে জড়ান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। এর জের ধরে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনে। সদস্য সচিব ছাড়া আহবায়ক নিজে একা বিভিন্ন উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেন। অন্যদিকে, আহবায়কের মতামত ছাড়া সদস্য সচিব বিভিন্ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
দলের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সেলিম উদ্দিন বলেন, তিনি সভাপতি থাকাকালে সকল উপজেলা কমিটি গঠন করেছিলেন। এরপর গেল ৭ বছরে কেউ তৃণমূল জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেননি। তিনি সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালে পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু এখন দলীয় মনোনয়ন দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সিলেটে জাতীয় পার্টির অবস্থান দিন দিন দুর্বল হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।গেল ইউপি নির্বাচনে সিলেট জেলার ১০৫টি ইউপি’র মধ্যে মাত্র ৩৬টিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিতে পেরেছে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে পাশ করেছেন মাত্র ২ জন। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এসেও মনোনয়নপত্র জমা দেননি ৩ প্রার্থী। অভিযোগ রয়েছে তারা দলীয় মনোনয়ন এনে প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পদবীধারী নেতাদেরও প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রসঙ্গে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব উসমান আলী বলেন, আহ্বায়ক তার ইচ্ছেমতো একক স্বাক্ষর ও সিদ্ধান্তে কমিটি দিচ্ছেন। তিনি আসলে জাতীয় পার্টির আদর্শে কতটুকু বিশ্বাসী সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ ২০০৫ সালে তিনি জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক মাসের মাথায় বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন। তিনি ড্রয়িংরুম বন্দি রাজনীতি করতে চান। দলের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। বিষয়টি কেন্দ্র ও বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান ওসমান।সদস্য সচিবের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কুনু মিয়া বলেন, তিনি আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। প্রায় সবকটি উপজেলা ও পৌরসভায় কমিটি দেয়া হয়ে গেছে। এখন সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
বিএ/২৩ ফেব্রুয়ারী