সিলেট৭১ ডেস্ক:; জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ‘শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা-২০২২’ পালন করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচীর। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে শিক্ষক ও নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রভাতফেরিটি প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ। সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল সাড়ে নয়টায় প্রতিষ্ঠানের সভাকক্ষে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাত, কবিতা আবৃত্তি, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, আলোচনাসভা এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত প্রায় ৫০০ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে অনুষ্ঠানে যোগদান করে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মো. কুদ্দুসুর রহমান, পিএসসি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সহকারী শিক্ষক মো. আতাউর রহমান।
অর্থনীতির প্রভাষক সাজ্জাদুজ্জামান চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, উপাধ্যক্ষ মো. আবদুল হান্নান, প্রভাষক সাইফ উদ্দিন আহমেদ, দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক-ক শাখার শিক্ষার্থী হাসানুল হক প্রহর (বান্না) এবং দশম শ্রেণির বিজ্ঞান-খ শাখার শিক্ষার্থী প্রত্যাশা তালুকদার তন্নী। কবিতা আবৃত্তি করেন চতুর্থ শ্রেণির ভেনাস শাখার শিক্ষার্থী দেবযানী সরকার মৌন ও দশম শ্রেণির খ শাখার শিক্ষার্থী স্বপ্নীল রায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ভাষা শহিদদের পাশাপাশি বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সকল পর্যায়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনকারী সবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তায় জন্ম নিয়েছিল একুশের চেতনা। এই চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে আত্মত্যাগের বীজমন্ত্র। পরবর্তীতে প্রতিটি গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে এই ভাষা আন্দোলন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সে সময়ে বাঙালির আত্মসচেতনতা ও আত্মপরিচয়ের যে বোধোদয় ঘটেছিল তা-ই নানা আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রূপ নিয়েছিল অধিকার আদায় ও স্বাধীনতার সংগ্রামে। একুশের পথ ধরেই চুয়ান্নর বিজয়, ছেষট্টির স্বাধিকারের দাবী উত্থাপন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও একাত্তরের ৩০ লাখ শহিদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে আপন মহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতি-বিজড়িত মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর আমাদের ইতিহাসের একটি রক্ত-রঙিন দিন নয়; এ দিন এখন পেয়েছে বিশ্বস্বীকৃতি, পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। বাঙালি জাতিসত্তার এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় এই একুশে। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ শুধু মহান শহিদ দিবস নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের মানুষ এখন জানে যে, মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী একমাত্র জাতি এই বাংলাভাষী বাঙালি জাতি। পৃথিবীর বুকে এটি এক বিরল ইতিহাস।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলা ভাষার প্রতি ছিলো গভীর শ্রদ্ধাবোধ ও প্রগাড় ভালোবাসা। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্বে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য তিনি উজ্জ্বল অবদান রাখেন। ছাত্র-জনতার মিছিলে পাক হায়নাদের গুলি করাকে তিনি জেলে থেকেই প্রতিবাদ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে মহিমান্বিত করেন।’
এ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠান আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। অনুষ্ঠানের সার্বিক সমন্বয় করেন উপাধ্যক্ষ এবং অনুষ্ঠানের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র প্রভাষক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এবিএ/২২ ফেব্রুয়ারী