সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ বিদেশ গিয়ে উপার্জন করে এলাকায় বাবার নামে কলেজ দেবেন, এমন কথাই বলেছিলেন সাজ্জাদ। সেই ছেলে যে লাশ হয়ে দেশে ফিরবে দুঃস্বপ্নেও এ কথা ভাবেননি নুরুল আমিন তালুকদার। ইতালিতে মৃত্যুর প্রায় এক মাস পর ফিরল ছেলের লাশ। নিজ হাতে ছেলের নিথর দেহটি কবরে শুইয়ে দিতে হবে এ কথা ভাবতেই বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নুরুল আমিনের। সন্তানের মুখটা শেষবারের মতো দেখা ও নিজ হাতে দাফন করতে পারছেন এতেই মনে শান্তি পাবেন বলে জানান অকালে সন্তানহারা পিতা।
ওদিকে বাড়িতে সাজ্জাদের মায়ের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে বাতাস। ‘আমার সোনার চান সাজ্জাদ, তুমি কোয়াই গেলা! তুমি না কইছলায় বিদেশ থাকি মার লাগি কততা আনবায়! কইছলায় বিদেশ গিয়া বড়লোক হইয়া দেশে ফিরবায়। অখন আমার বাজানে ফিরল লাশ অইয়া। ইয়া আল্লাহ, তুমি আমার বাজানডারে কিতার লাগি আমার বুকতন কাইরা নিলায়।’ বিলাপ করে কাঁদছেন তিনি। প্রায় এক মাস ধরে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তাঁর। এখন শুধু শুষ্ক গলার বিলাপ করছেন। অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ঠান্ডায় মারা যান সাজ্জাদ হোসেন (২৫)। এক মাস পর তাঁর মরদেহ ফিরল মা আলেয়া বেগমের কাছে। রোববার সকাল ৭টায় সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের আটগাঁও ফেকুল মাহমুদপুর গ্রামে পৌঁছায় সাজ্জাদের মরদেহ। কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন মা। ছুটে আসছেন সাজ্জাদের সহপাঠীরা। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও প্রিয়জনেরা শোকে মুহ্যমান। সাজ্জাদের ভাই তোফায়েল আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘দালালের প্রলোভনে পড়ে আমার ভাইকে হারালাম। আর কোনো ভাই যেন তার ভাইকে এভাবে না হারায়, এই দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।’
ভীমখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘সাজ্জাদের মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকা শোকে স্তব্ধ। ইদানীং লক্ষ্য করা গেছে মানব পাচারকারীরা আমাদের এলাকার যুবকদের ইউরোপ যেতে নানাভাবে প্রলোভন দেখাচ্ছে।’ সবাইকে সচেতন থাকার আবেদন জানান এই ইউপি চেয়ারম্যান। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন গত ডিসেম্বরে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের মো. রফিকের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকার চুক্তিতে দুবাই হয়ে লিবিয়া যান। কিছুদিন সেখানে অবস্থানের পর লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য নতুন করে আরও ৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়। টাকাও পরিশোধ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত ২৩ জানুয়ারি একটি নৌকায় সাজ্জাদ আহমেদসহ মোট ২৮০ জন ইতালির ল্যাম্পাদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন। ২৫ জানুয়ারি সাজ্জাদের পরিবার বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারে, সাজ্জাদসহ সাত বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগরে ঠান্ডায় জমে মারা গেছেন।
বিএ/২১ ফেব্রুয়ারি