শাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃঃশাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলায় আহত শিক্ষার্থী সজল কুন্ডের অস্ত্রপ্রচারের পর এখনো তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৭৫টি স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন। শনিবার রাত ৮টায় গনমাধ্যমকে এমন তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর যে পুলিশী হামলা হয় তাতে আমার শরীরে শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। গত ১৫ দিন যাবত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরমধ্যেই আমার হাতে একটি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যাতে ডান হাতের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর আশপাশের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা হয়। এখনো আমার শরীরে বেশ কিছু স্থানে ৭৫টিরও বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশংকা থাকায় চিকিংসকেরা আরও অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আমাকে হয়তো এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে নতুন নতুন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কাও অমূলক নয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্মানিত চিকিৎসকগণ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এতদিন ধরে আমাকে যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, গত ১২ তারিখে আমাদের প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের সমস্ত দাবির ব্যাপারে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি একইসাথে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তা অচিরেই খুলে দেয়া হবে। কিন্তু তার আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মামলাসমূহ তোলার বা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমি দেখতে পাইনি। শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রতা আমাকে প্রচন্ড হতাশ করেছে।
সজল কুন্ডু বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে আমাকে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান, আমার ভবিষ্যতের সমস্ত চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও আমাকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। আমাকে চাকরি প্রদানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত আমার ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি। আমার বাবা মৃত, অসুস্থ মাকে আমার অসচ্ছল পরিবার, সম্প্রতি কিছু ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। একটি দিনের ব্যবধানে যে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল, সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে তার আশংকায় এখন যে আমাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তার দায় কে নেবে? আমাদের প্রত্যেকটি দাবি মেনে নিয়ে, আমাদের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে তা থেকে আমাদের সবাইকে মুক্তি দেয়া হোক। আমি শিক্ষার্থীদের সাথে সমস্বরে মহামান্য আচার্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই আবেদনই করতে চাই।
বিএ/২০ ফেব্রুয়ারি