জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরশহরে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ শহরের পৌর পয়েন্টস্থ একটি মার্কেটের অভি মেডিকেল নামের এক ফার্মেসীর দোকান থেকে ওই নারীর খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত নারীর নাম শাহনাজ পারভীন জোৎসা (৩৫)। তিনি উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী ছরুক মিয়ার স্ত্রী।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ সুত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে পৌরশহরের নিজ মালিকানাধীন বাসাবাড়িতে সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রী তাঁর তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বাসার নিকটবর্তী ব্যারিষ্টার আব্দুল মতিন মার্কেটে অভি মেডিকেল ফার্সেমীতে ঔষধপত্র ক্রয়ের সুত্রে যাতায়াত করছেন।
গত বুধবার বিকেলে ফার্মেসীতে যাচ্ছেন বলে বাসা থেকে বের হন প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। এদিকে নিহতের ছোট ভাই তাঁর বোন বাসায় ফিরেনি জানতে পেরে ওই ফার্মেসীতে যান সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে। তখন ফার্মেসী বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফার্মেসীর মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে মোবাইলে কল দিলে জিতেন্দ্র জানায়, তাঁর বোন ঔষধ না পেয়ে চলে গেছেন।
নিহতের ব্যবহৃত মোবাইলফোনে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে অন্য এক নারী ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি (নিহত নারী) সিলেট ওসমানিতে আছেন। সেখানে যোগাযোগ করেও তাঁর সন্ধ্যান মিলেনি। আরেকবার ফোন দিলে একই নারী ফোন রিসিভ করে জানায়, শহরের আর্টস্কুল এলাকায় আছেন। এরকম একেক সময় একেক কথা বলে বিভ্রান্তি করতে থাকে। পরে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে নিহতের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রাতভর বিভিন্ন স্থানে যোগযোগ করেও নারীর সন্ধান না পেয়ে বৃহ¯পতিবার সকাল ১১টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জগন্নাথপুর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলামের উপস্থিতিতে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ তালাবদ্ধ অভি ফার্মেসীর তালা ভেঙে দোকানে অভিযান চালায়।
এক পর্যায়ে দোকানের রোগি দেখার টেবিলের নিচে বিছানার চাঁদর দিয়ে মুড়ানো ওই নারী শরীর ছয় টুকরো অংশ দেখতে পায় পুলিশ। ঘটনার পর থেকে ফার্মেসির মালিক জিতেশ গোপ ও তাঁর পরিবার পলাতক রয়েছেন। জিতেশ গোপ কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সইলা গ্রামের যাদব গোপের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছিলেন। এদিকে এ হত্যাকান্ডে শহরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন হত্যা করা হলো নারী কে ?। ব্যস্ততম এলাকায় কি করে হত্যা হলো। কেউ কেউ ধারণা করছেন টাকার কারণে এ হত্যাকান্ড হতে পারে। নিহতের ছোট ভাই হেলাল মিয়া বলেন, আমার বোনের পরিবারের সঙ্গে আমি বসবাস করছি। বৃহ¯পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ থেকে ৪টার মধ্যে ঔষধের জন্য বাসা থেকে আমার বোন বের হন। বাসায় ফিরতে দেরি দেখে প্রথম মনে করেছিলাম হয়তো মার্কেটে গিয়েছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে আমি বোনকে খোঁজতে ফার্মেসীতে গিয়ে দেখি ফার্মেসী বন্ধ। পরে ফার্মেসীর দোকানের মালিক জিতেশ কে কল দিয়ে বোনের কথা বলি। এসময় সে জানায়, তিনি তার দোকানে ঔষধ না পেয়ে অন্য দোকানে চলে গেছেন। এরপর আমার বোনের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলে অন্য এক নারী কণ্ঠ শুনতে পাই। আমি আমার বোনের খবর জানতে চাইলে ওই নারী আমাকে একেক সময় একেক কথা বলতে থাকলে আমার সন্দেহে হয়। পরে আমার সন্ধ্যার দিকে থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। পুলিশকে জানানোর পর ফোনটি সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায়। তিনি জানান, বুধবার তাঁর বোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। তবে কত টাকা তুলেছেন তিনি তা জানেন না। তাঁর বোনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এই নৃসংশ হত্যার বিচার চান। হেলাল জানান, তাঁর বোন জামাই দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে বসবাস করছেন। বোনের পরিবারের সঙ্গে তিনি শহরে বসবাস করেন। নিহত নারীর এক ছেলে ও বোন মেয়ে রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমান বলেন প্রাথমিকভাবে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
এবিএ/১৭ ফেব্রুয়ারী