সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি;: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সুরাই নদীতে মিলনগঞ্জ বাজার সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মূল সেতুর ৪টি পিলারের মধ্যে ৩টি পিলারের কংক্রিট ধসে পড়ে কেবল রডের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। এ অবস্থায় যেকোনো মূহুর্তে সেতুটি ধসে পড়ার আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন ।
সেখানকার বাসিন্দারা জানান,দিরাই ও জগন্নাথপুর উপজেলার অধিকাংশ লোকজনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই সেতু। বর্তমানে প্রাণ ভয়ে লোকজন সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে চান না। পিলারের কংক্রিট নেই, রডগুলো ঝুলছে। তারা অবিলম্বে সেতুটি নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর’র (এলজিইডি) দিরাই উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইফতেখার হোসেন সিলেট৭১নিউজকে জানিয়েছেন, ঝুকিপূর্ণ ব্রীজটি আমরা পরিদর্শন করেছি। ব্রীজটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আধা সরকারি পত্র (ডেমি অফিস লেটার-ডিও লেটার) দিয়েছেন। সংসদ সদস্যের জন্যে বরাদ্দকৃত নিজস্ব তহবিল থেকে ব্রীজের অর্থ দেয়া হবে। আজ-কালের মধ্যে আমাদের প্রকৌশলীরা সরেজমিনে ব্রীজ এলাকা মাপজোক করে প্রকল্প তৈরি করবেন। ব্রীজটি তৈরির পরে এই এলাকায় যানবাহনের চলাচলও বেড়ে যাবে। এজন্যে ব্রীজ থেকে টংগর পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণসহ পাকাকরণ ও নলুয়ার হাওরে ইতোপূর্বে নির্মিত সাবমার্সিবল (ডুবন্ত) রাস্তাও সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, প্রকল্প তৈরি করা, অনুমোদনসহ আনুসাঙ্গিক কাজে কয়েক মাস লেগে যাবে। সামনের বর্ষায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে আগামী শুকনো মৌসুমে কাজ শুরু হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মোট ১২ টি পিলারের ওপর ১৯৮০ এর দশকে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নদীর মধ্যে ৪ টি পিলারের ওপর দাঁড় করা হয় সেতুটি। ৪ টি পিলারের মধ্যে ৩ টিতে কংক্রিট নেই বললেই চলে। পুরনো রডগুলো ঠাঁয় বের হয়ে নীচ দিয়ে ঝুলে রয়েছে। পার্শ্বের অন্য পিলারগুলোও দুর্বল হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর আগেই সেতুর রেলিং-এর বেশিরভাগ ভেঙে গেছে। ভয়ে লোকজন সেতু দিয়ে তেমন একটা চলাচল করেন না। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা তো দূরের কথা; অনেকে ভয়ে সেতুতে উঠতেও আগ্রহী হন না। কয়েক বছর ধরে সেতুটির পিলার ভেঙে এমন অবস্থায় পড়লেও এর সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ না নেয়ায় এলাকাবাসী হতাশ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন সেতুটি নির্মাণের দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলনও করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। এতে লোকজন তাদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, সেতুটির পূর্ব প্রান্তে টংগর গ্রাম ও পশ্চিম প্রান্তে তারাপাশা গ্রাম। গ্রাম দু’টি দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত। সেতুর ঠিক পশ্চিম প্রান্তে উপজেলার অন্যতম বৃহৎ মিলনগঞ্জ বাজার, আছে প্রাচীনতম তারাপাশা মাদরাসাসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাজারটিতে বিপুল সংখ্যক ক্রেতার আগমন ঘটে। পূর্ব প্রান্তে আব্দুল মতলিব উচ্চ বিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী আসা যাওয়া করেন। দিরাই উপজেলার তাড়ল, কুলঞ্জ, জগদল ইউনিয়ন, জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজন শুকনো মৌসুমে এই সেতু দিয়ে সহজে যাতায়াত করতে পারেন। সেতুটি দিয়ে কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা কম সময়ে নিকটস্থ উপজেলা জগন্নাথপুর ও বিভাগীয় শহর সিলেটে যাতায়াত করতেন।
টংগর গ্রামের বাসিন্দা ও কুলঞ্জ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ খান জানান, ১৯৮০ দশকে নির্মিত পুরাতন এই সেতুটি চলাচলের ক্ষেত্রে বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক লোক চলাচল করেন। সেতুটির রেলিং অনেক আগেই ভেঙ্গে পড়েছে। সেতুর উপরে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় গর্ত।
পিলারের রড বের হয়ে এলোপাতাড়ি পড়ে আছে। এর ফলে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।
রাড়ইল গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সেতুটি নির্মাণের জন্যে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। সেতুটি নির্মাণে আমাদের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা ডিও লেটার দিয়েছেন। আমরা দ্রুত নতুন সেতুটি চাই।
জানা গেছে, প্রায় চার দশক আগে উপজেলা পদ্ধতির শুরুতে (সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য) নাছির উদ্দিন চৌধুরী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই সুরাই নদীর উপর এই সেতুটি নির্মাণ করেন। সেতুটি নির্মাণের পর নদীর উভয় পাশের টংগর ও তারাপাশাসহ আশপাশের গ্রামসমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে উঠে। সেতুকে ঘিরেই প্রথমে সুরাই নদীর তীরে গড়ে উঠে হাট। ছোট্ট হাট থেকেই চার গ্রামের সকলের ঐক্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে মিলনগঞ্জ বাজার।
আইআর/১৩ ফেব্রুয়ারি