হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ প্রেমিক-প্রেমিকাকে একসঙ্গে দেখে ফেলা এবং বিষয়টি প্রেমিকার মাকে জানিয়ে দেওয়ার কারণে ৯ বছরের শিশু লিজাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে ঘাতকেরা। পরে তার মরদেহের বাঁশঝাড়ে ফেলে রাখা হয়। হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পর ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তারা আদালতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পিটিআইএর পুলিশ সুপার মো. আল মামুন শিকদার। এ ঘটনায় নিহত লিজা আক্তার (৯) হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার গন্ধবপুর গ্রামের মো. সাগর আলীর মেয়ে। এই মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, একই গ্রামের বাহার উদ্দিন (২১), খাদিজা আক্তার তাজরীন (২৭) ও আমেনা খাতুন (৫০)। এ ছাড়া মামলার প্রধান আসামি প্রেমিক যুগল হলেন তাকবীর হাসান (২০) ও শান্তা (১৮)। তাঁরা পলাতক রয়েছেন। পুলিশ সুপার জানান, গত বছরের ২১ জুলাই ঈদ-উল আজহার দিন সন্ধ্যায় লিজাকে (৯) তার মা সেলিনা বেগম প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী আনতে গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাজারে পাঠান। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও সে ফিরে আসেনি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি পরিবার। পরে ওই দিন রাতেই শিশু লিজার বাবা সাগর আলী মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের চার দিন পর গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড়ে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে লিজার অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পান এক নারী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। রাতে লিজার বাবা সাগর আলী অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মাধবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় হবিগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে পিটিআইএর সদস্যরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গত সোম ও মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে একই গ্রামের বাহার উদ্দিন, খাদিজা আক্তার তাজরীন ও আমেনা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন তাঁরা। পরে গত বুধবার আসামিদের আদালতে হাজির করলে বাহার ও তাজরীন হবিগঞ্জের সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুমুর সরকারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিরা আদালতকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত তাজরীনের ছোট ভাই তাকবীর হাসানের (২০) সঙ্গে প্রতিবেশী কিশোরী শান্তার (১৮) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে তাঁরা দুজনে প্রায়ই দেখা করতেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে এক সন্ধ্যায় শান্তা ও তাকবীর দেখা করার সময় শিশু লিজা তাঁদের একসঙ্গে দেখে ফেলে এবং বিষয়টি সে শান্তার মাকে জানিয়ে দেয়। এরপর শান্তার মা শান্তাকে গালিগালাজ করেন এবং তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেন। এতে তাঁদের প্রেম নষ্ট হওয়ার পথে চলে যায়। এই রাগে ও ক্ষোভে লিজাকে শায়েস্তা করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন শান্তা ও তাকবির। গত বছরের ২১ জুলাই সন্ধ্যায় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে লিজাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যান তাঁরা। এ সময় তাঁরা লিজাকে গলা টিপে হত্যা করে বাঁশঝাড়ে ফেলে দেন।পুলিশ সুপার মো. আল মামুন শিকদার বলেন, হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকজন ঘাতক অংশ নেন। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে নাম-পরিচয় ও ঘাতকের সংখ্যা প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
বিএ/১১ ফেব্রুয়ারি