স্টাফরিপোর্টার:: রোববার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ৮টার দিকে ভারতের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। শনিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে আচমকা লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। দিতে হয় ভেন্টিলেশন। সেখান থেকে আর ফেরানো যায়নি তাকে।
প্রায় চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। বন্ধ রাখা হয়েছিল লাইফ সাপোর্ট। আশার আলো দেখছিলেন চিকিৎসকরাও। তবে শনিবার সকালে শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। এরপর বোন লতাকে দেখতে হাসপাতালে যান আরেক কিংবদন্তি আশা ভোঁসলে ও পরিবারের বাকি সদস্যরা।
ভারতের নাইটেঙ্গেল হিসেবে পরিচিত লতা মঙ্গেশকর। ঈর্ষণীয় ক্যারিয়ারে ভূষিত হয়েছেন ভারতরত্ন সম্মানে। পেয়েছেন পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। প্লে-ব্যাকের জন্য পেয়েছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কার।
বাঁ দিক থেকে মীনা, আশা, লতা, হৃদয়নাথ এবং ঊষা।
বাঁ দিক থেকে মীনা, আশা, লতা, হৃদয়নাথ এবং ঊষা।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ইন্দোরে মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। তার বাবা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন শাস্ত্রীয়সংগীত শিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা। মা শেবান্তি ছিলেন গৃহিণী। তার ছোট বোন আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও মীনা মঙ্গেশকর। একমাত্র ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
১৯৪২ সালে বাবা দীনানাথ মঙ্গেশকর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ১৩ বছর বয়সী লতাকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। এজন্য গান গাওয়া ও অভিনয়ের পথে পা বাড়ান তিনি।
লতা মঙ্গেশকর প্রথম গান গেয়েছিলেন মারাঠি ছবি ‘কিতি হাসাল’-এর (১৯৪২) জন্য। তবে চূড়ান্ত সম্পাদনায় বাদ দেওয়া হয় সেই গানটি। পরবর্তীকালে ‘মজবুর’ (১৯৪৮) ছবিতে প্রথম বড় সুযোগ পান। এ ছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলেন তিনি। তবে তার প্রথম তুমুল জনপ্রিয় গান হলো ‘মহল’ (১৯৪৯) ছবির ‘আয়েগা আনেওয়ালা’। এতে অভিনয় করেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী মধুবালা।
পঞ্চাশের দশকে হিন্দি ছবিতে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন লতা। তখন থেকেই তার ক্যারিয়ারের পারদ ক্রমশ ওপরে উঠেছে। তবে সে সময় শচীন দেব বর্মণের সঙ্গে দ্বৈরথের কারণে দীর্ঘদিন কাজ করেননি এই সুরকার-গায়িকা জুটি। তবে পরবর্তীকালে শচীন দেব বর্মণের ছেলে রাহুল দেব বর্মণের সুরে অনেক গান গেয়েছেন লতা। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘পরিচয়’ (১৯৭২) ছবির ‘বীতি না বিতাই’। এর জন্য ১৯৭৩ সালে সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।
বাংলা সঙ্গীতের দুই প্রবাদপুরুষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং সলিল চৌধুরীর সঙ্গে।
বাংলা সঙ্গীতের দুই প্রবাদপুরুষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং সলিল চৌধুরীর সঙ্গে।
১৯৭৪ সালে সবচেয়ে বেশি গানের শিল্পী হিসেবে গিনেস বুকে স্থান পান লতা। নব্বই দশকে মোজার্ট অব মাদ্রাজ খ্যাত এ আর রাহমান ও প্রয়াত গজল সম্রাট জগজিৎ সিয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। পরিচালক যশ চোপড়ার প্রায় সব ছবির গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
১৯৯০ সালে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়েন লতা মঙ্গেশকর। তার প্রযোজনায় গুলজার পরিচালনা করেন ‘লেকিন’ (১৯৯০) ছবিটি। এতে ‘ইয়ারা সিলি সিলি’ গানের জন্য তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান লতা। এটি সুর করেন তার ছোট ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
সিলেট৭১নিউজ/টিআর