সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: সড়ক ও জনপথের কোটি কোটি টাকার জায়গা দখল করে কেউ নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। আবার কেউ মার্কেট ও দোকানকোটা নির্মাণ করে আদায় করছেন ভাড়া। সড়ক ও জনপথ (সওজ) থেকে স্থাপনা উচ্ছেদে বারবার নোটিশ করা হলেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি। বরং নতুন করে জায়গা দখল করে কেউ কেউ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
এই অবস্থায় হার্ডলাইনে অ্যাকশনে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সওজ সিলেট অফিস। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সহযোগিতা নিয়ে এবার তারা মাঠে নামছে উচ্ছেদ অভিযানে। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আম্বরখানা থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত উভয়পাশের সকল স্থাপনা উচ্ছেদে শিগগিরই সওজ ও সিসিক যৌথভাবে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। এই অভিযানে দখলদার যতোই প্রভাবশালী হোন না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও আগাম ঘোষনা দেয়া হয়েছে।
সওজ সূত্র জানায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম অংশ আম্বরখানা থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এই সড়কের উভয়পাশে সড়কের মূল্যবান জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল অনেক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। কেউ কেউ সড়কের জায়গায় বর্ধিত করেছেন বাসা-বাড়ি।
বছরের পর বছর ধরে জায়গা দখলের এই মহোৎসব চললেও সওজ কর্তৃপক্ষ অনেকটা নিরব ছিলেন। মাঝে মধ্যে দখলদারদের নোটিশ দিলেও প্রভাবশালী দখলদাররা তা আমলে নেননি। সওজ কর্তৃপক্ষও দখল বন্ধ বা দখলদার উচ্ছেদে কোন অ্যাকশনে যাননি। তবে এবার মহাসড়কটির আম্বরখানা-টুকেরবাজার অংশে বড়সড় অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সওজ।
এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযানের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি প্রচারিত এই গণবিজ্ঞপ্তিতে সকল অবৈধ দখলদারদের স্বেচ্ছায় তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে একসপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়া হয়। এই সময়ের পর কাউকে আর নতুন করে সময় দেয়া হবে না বলেও গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। গতকাল বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সওজের বেঁধে দেয়া এই সময়সীমা শেষ হয়েছে।
সওজ সিলেট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ আম্বরখানা-টুকেরবাজার অংশে সড়কের জায়গা দখল করে অন্তত অর্ধশত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কেউ পুরো ভবন আবার কেউ ভবনের অংশবিশেষ সড়কের জায়গায় নির্মাণ করেছেন। এছাড়া আরও অনেকগুলো ছোটখাটো স্থাপনা রয়েছে। অবৈধ সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে সওজের মূল্যবান জায়গা দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরই ওই সড়কে সংস্কার কাজ শুরু হবে। সড়কের যেসব অংশে বেশিদিন পিচ টিকে না, সেসব অংশে ঢালাই দেয়া হবে। বাকি অংশে খুব ভালোমানের সংস্কার কাজ করা হবে। শিগগির এসব কাজের দরপত্রও আহ্বান করা হবে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের সীমানা টুকেরবাজার পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে। তাই বর্ধিত এই অংশের সড়কে ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের আম্বরখানা-টুকেরবাজার অংশের সড়কের উভয় পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য ৩২ কোটি টাকার টেন্ডার করেছে সিসিক। কিন্তু অবৈধ স্থাপনার কারণে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছে না।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ‘সড়কের উভয় পাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ১০ থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত দখল করে রেখেছেন। কিন্তু ওই জায়গার মালিক সওজ হওয়ায় সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযানও চালাতে পারছে না। তাই যৌথ উদ্যোগে এবার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়াররা অবৈধ স্থাপনাগুলো লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করবেন। এরপর যৌথ উদ্যোগে শুরু হবে উচ্ছেদ।’
আইআর/ ০৩ ফেব্রুয়ারি