কানাইঘাট প্রতিনিধি:: গত সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় এলাকায় প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া ফরিদ উদ্দিনের লাশ দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) ময়না তদন্তের পর ফরিদ উদ্দিনের লাশ সন্ধ্যার দিকে তার নিজ বাড়ি খাসাড়িপাড়া গ্রামে নিয়ে আসলে পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাদ এশা নিহতের জানাজার নামাজ স্থানীয় খাসাড়ীপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজার নামাজে এলাকার হাজারো লোক শরীক হন। এ সময় ফরিদ উদ্দিনের প্রকৃত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারকরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান স্বজনরা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) জাহিদুল হক জানান, ময়না তদন্তের পর নিহতের লাশ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত ফরিদ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
জাহিদুল হক আরো বলেন, ফরিদ উদ্দিনের খুনিদের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে জোর তদন্ত চলছে। সীমান্তবর্তী দূর্গম এলাকায় খুনিরা হত্যাকাণ্ড দ্রুত সংঘটিত করে পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের চিরুনি অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, ফরিদ উদ্দিন মোটরসাইকেলযোগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার ভায়রাভাই শাহীন আহমদকে নিয়ে স্থানীয় মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বড়খেওড় এফআইবিডিবি স্কুলের সামনে আসামাত্র কয়েকজন দুর্বৃত্ত ফরিদ উদ্দিনের গতিরোধ করে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। গুরতর আহত অবস্থায় প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফরিদ। দুর্বৃত্তদের হামলায় ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে থাকা তার ভায়রাভাই শাহীন আহমদও আহত হন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যায় কানাইঘাট থানার একদল পুলিশ। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম।
নিহতের স্বজনরা জানান, ফরিদ উদ্দিন তার ফেসবুকের নিজস্ব আইডিতে এনাম খান নামে এক ব্যক্তি তাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন। যা গত কয়েকদিন থেকে ফরিদ উদ্দিন তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। এর জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
পরিবারের স্বজনরা এমন ধারনা করলেও পুলিশ এখনও কোনো সূত্র পায়নি বলে জানা গেছে। তবে স্বজনদের সন্দেহ যার দিকে সেই এনামের বাড়ি একই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই এনাম বিদেশে থাকেন।
এদিকে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদ উদ্দিনকে যখন কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করার সময় তার সাথে শাহিন আহমদ নামে আরো একজন ছিলেন। তিনি ফরিদের ভায়রাভাই। খুনিরা মুখোশ পরে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করায় শাহিন আহমদ তাদের চিনতে পারেননি। পূর্ব বিরোধ ও ফেইসবুকে লেখালেখি নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারনা করা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার আগে ফরিদ উদ্দিনের সাথে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের বিরোধ চলে আসছিল। অনুমানিক আড়াই বছর আগে নাজিম উদ্দিনকে ফরিদ উদ্দিন মারধর করলে তার বিরুদ্ধে সে সময় মামলা করেন নাজিম উদ্দিন। এরপর বছর খানিক পূর্বে ফরিদ উদ্দিনের স্ত্রীর বড় ভাই কয়ছর আহমদকে কুপিয়ে দুর্বৃত্তরা এক পা বিচ্ছিন্ন করে ফেললে সেই মামলায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পরে সেই মামলায় নাজিম উদ্দিন জেলও খাটেন।
মাসখানেক আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নাজিম উদ্দিন লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড থেকে মেম্বার পদে নির্বাচিত হলে ফরিদ উদ্দিন তার ফেইসবুক আইডিতে ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। এর জের ধরে নাজিম উদ্দিনের জার্মান প্রবাসী ভাই এনাম খান নামক ফেইসবুক আইডি থেকে ফরিদ উদ্দিনের মেসেঞ্জারে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিলে নিহত ফরিদ উদ্দিন মৃত্যুর কয়েকদিন আগে থেকেই তার ফেইসবুক আইডিতে হুমকির বিষয়টি পোস্ট করেন। ফেইসবুকে লেখালেখি নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবিএ/ ০১ ফেব্রুয়ারী